من الأحكام الفقهية في الطهارة والصلاة والجنائز (بنغالي)

  • earth ভাষা
    (بنغالي)
  • earth সংকলন:
    الشيخ محمد بن صالح العثيمين
PHPWord

 

 

 

مِنَ الأَحْكَامِ الفِقْهِيَّةِ فِي

الطَّهَارَةِ وَالصَّلَاةِ وَالجَنَائِزِ

 

পবিত্রতা, সালাত এবং জানাযা সম্পর্কিত ফিকহী বিধানসমূহ

 

 

لِفَضِيلَةِ الشَّيْخِ العَلَّامَةِ

مُحَمَّدِ بْنِ صَالِحٍ العُثَيْمِينِ

غَفَرَ اللَّهُ لَهُ وَلِوَالِدَيْهِ وَلِلمُسْلِمِينَ

 

সম্মানিত শাইখ আল্লামা

মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসাইমীন

আল্লাহ তাকে, তার পিতা-মাতা এবং মুসলিমদেরকে ক্ষমা করুন!

 


بِسْمِ اللهِ الرَّحمَنِ الرَّحِيمِ

বিত্রতা, সালাত এবং জানাযা সম্পর্কিত ফিকহী বিধানসমূহ

ভূমিকা

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছেই ইস্তেগফার ও তাওবা করি। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের নফসের অনিষ্টসমূহ এবং আমাদের কর্মের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ তা‘আলা যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তার ওপর, তার পরিবার ও সকল সাহাবীর ওপর এবং কিয়ামত অবধি যারা তাদের ইহসানের সঙ্গে অনুসরণ করবে তাদের সবার ওপর অসংখ্য সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। অতপর:

দুটি মৌলিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই ইবাদত পূর্ণাঙ্গ বা কবুল হয়, তা হলো: আল্লাহর প্রতি ইখলাস এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ...﴾

“আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫] আল্লাহর প্রতি ইখলাসের অর্থ হলো, একজন ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁর আদেশ পালন করার ইচ্ছা পোষণ করা। আর আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করার অর্থ হলো: আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে যা এসেছে তার উপর ভিত্তি করে নিজের আমল পরিচালনা করা এবং এতে কিছু যোগ বা বিয়োগ না করা। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর জ্ঞান ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।

অতএব, একজন ব্যক্তির জন্য এটা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে তার সমস্ত ইবাদত আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহের প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সম্পাদন হচ্ছে, যেন সে জেনে-বুঝে আল্লাহর ইবাদত আঞ্জাম দেন, তাঁর ইবাদতে তিনি যে পথ অনুসরণ করেন তার বিশুদ্ধতার প্রতি নিশ্চিত থাকেন। সে যেন সদা স্মরণ রাখে যে, এই কাজে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী, তিনিই তার ইমাম আর সে তাঁর অনুসরণকারী। এতে করে তার হৃদয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং সে অনুভব করবে যে, এই আমলের মাধ্যমে সে আল্লাহর আরও নৈকট্য লাভ করছে।

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ...﴾

“আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে...।” [আল-বাইয়্যিনাহ: ৫]

এবং এও জেনে রাখা উচিত যে, কিছু ইবাদত এমন আছে, যেগুলো পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।, বিশেষ করে ঐসব ইবাদত, যেগুলো বারবার করা হয়—যেমন অযু, গোসল এবং সালাত।

এর হিকমত - আল্লাহই ভালো জানেন - বিভিন্ন দিক থেকে হয়ে থাকে:

প্রথমত: মুকাল্লাফ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ব্যক্তির জন্য আমল সহজ করা; যাতে সে উক্ত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে পারে। আর যেটিই সে করবে বা নির্বাচন করবে, তাতে সে অনুসরণকারী (সুন্নাহর) হিসেবেই গণ্য হবে।

দ্বিতীয়ত: এক পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে লেগে থাকার কারণে যদি অবসাদ ও বিরক্তির সৃষ্টি হয়, তা দূর করা।

তৃতীয়ত: ইবাদত বাস্তবায়নে অন্তরের সচেতনতা ও সক্রিয়তা বজায় রাখা। কারণ, কেউ যদি একাধারে একই ধরণের পদ্ধতিতে ইবাদাত করে যেতে থাকে, তবে তা এক সময় ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয়। ফলে দেখা যায়, সে ঐ কাজটি নিজের অজান্তেই বলে অথবা করে ফেলে, অথচ সে বুঝতেও পারে না। অথচ যদি সে এক পদ্ধতি থেকে অন্য পদ্ধতিতে আমল করে, তাহলে তার অন্তর সচল থাকে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে সক্রিয় থাকে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য ইবাদত করার সত্যিকারের মানসিকতা তার মধ্যে জাগ্রত হয়, এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণও সম্পন্ন হয়।

আলিমগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) এই ধরণের ইবাদত সম্পর্কে দ্বিমত করেছেন:

এতে কি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির উপর স্থির থাকা উত্তম? অর্থাৎ, সবচেয়ে পরিপূর্ণ, বা সবচেয়ে সহীহ, বা এ জাতীয় কোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিয়ে তাতেই অটল থাকা? না কি উত্তম হলো—কখনও একটি পদ্ধতি পালন করা আবার কখনও অন্যটি, এভাবে বিভিন্ন পদ্ধতি পালনের মাধ্যমে বৈচিত্র্য বজায় রাখা?

গ্রহণযোগ্য মত হলো: উত্তম হচ্ছে কখনও এক পদ্ধতিতে আবার কখনও অন্য পদ্ধতিতে ইবাদত করা। যাতে উভয় পদ্ধতির আমল করা হয়ে যায় এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ অনুসরণ সম্পন্ন হয়। তবে যদি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি কোনো বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে সে পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সেই উপযুক্ত পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে, যেমন: সালাতুল খাওফ (ভয়ভীতির সময়ের নামায)-এর কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি।

বিভিন্ন পদ্ধতিতে যেসব ইবাদত বর্ণিত হয়েছে এবং যা এই নিয়মের আওতায় আসে, তার মধ্যে রয়েছে: পবিত্রতা সম্পর্কিত কতিপয় বিধান, সালাতের ধরণ এবং সালাতে পাঠকৃত দু‘আসমূহ।

আর (এখানে) সংক্ষেপে কিছু ফিকহী বিধান সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়েছে, বিশেষ করে তাহারাত (পবিত্রতা), সালাত এবং জানাযার বিষয়ে। এতে আমরা নির্ভর করেছি আল্লাহ্‌র কিতাবে বর্ণিত দলিলসমূহ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহীহ হাদীসের উপর।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের কাজকে সম্পূর্ণরূপে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কবুল করেন এবং এটিকে তাঁর শরী‘আতের সংরক্ষণ এবং তাঁর বান্দাদের জন্য কল্যাণকর করে তোলেন। নিশ্চয় তিনি উদার ও মহান।

আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। আল্লাহ দরূদ ও সালাম নাযিল করুন তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মদ-এর উপর, তার পরিবার ও সাহাবীদের সকলের উপর এবং যারা কিয়ামত পর্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের অনুসরণ করবে তাদের উপর।

মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসাইমীন

প্রথম পরিচ্ছেদ: পবিত্রতা

অযু।

গোসল।

তায়াম্মুম।

মোজার উপর মাসাহ।

পাগড়ির উপর মাসাহ।

ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ।

অযু।

অযু: এটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চারটি অঙ্গ ধৌত করে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার একটি প্রক্রিয়া।

এটি যারা সাধারণ অপবিত্র অবস্থায় আছে এবং সালাত আদায় করতে চায় তাদের প্রত্যেকের উপর ফরয, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ...﴾

“হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথাসমূহ মাসেহ কর এবং পাগুলো টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।” [আল-মায়েদা: ৬]

এটি সালাতের বিশুদ্ধতা এবং গ্রহণযোগ্যতার জন্য শর্ত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةَ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ».

"তোমাদের কারো যখন অযু ভেঙে যায়, তখন সে অযু না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তার সালাত কবুল করবেন না।" হাদীসটি ইমাম বুখারী আবূ হুরাইরা রদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন।1

অযুর ফযীলত প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে রয়েছে:

উমার রদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«مَا ‌مِنْكُمْ ‌مِنْ ‌أَحَدٍ ‌يَتَوَضَّأُ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ».

“তোমাদের যে কেউ অযু করে এবং পরিপূর্ণরূপে তা সম্পাদন করে, অতঃপর এই দু’আ পাঠ করে: "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুল্লাহি ওয়া রাসূলুহু।" (অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।) তাহলে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়। সেগুলোর যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে সে প্রবেশ করবে।’’2

উছমান রদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ، ‌حَتَّى ‌تَخْرُجَ ‌مِنْ ‌تَحْتِ ‌أَظْفَارِهِ».

“যে ব্যক্তি অযু করে এবং তা উত্তমরূপে সম্পাদন করে, তার দেহ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের ভিতর থেকেও (গুনাহ) বের হয়ে যায়।” মুসলিম।3

আলী ইবনু আবু তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، ‌وَإِعْمَالُ ‌الْأَقْدَامِ ‌إِلَى ‌الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ يَغْسِلُ الْخَطَايَا غَسْلًا».

"কষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে অযু করা, মসজিদে হেঁটে যাওয়া এবং সালাতের পর পরবর্তী সালাতের জন্য অপেক্ষা করা পাপকে সম্পূর্ণরূপে ধুয়ে দেয়।"4

* অযুর বিবরণ:

১- অন্তরে অপবিত্রতা দূর করার নিয়ত করা - নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করে-, অথবা যে জন্য অযু করা শরী‘আতের বিধান রয়েছে সেটার নিয়ত করা যেমন সালাত; কারণ আল্লাহ তা‘আলা জানেন তার অন্তরে কী আছে, অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অযু, সালাত বা তার কোনো ইবাদতে এই নিয়ত উচ্চারণ করেননি।

২- অতঃপর বলবে, “বিসমিল্লাহ”।

৩- তারপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।

৪- তারপর সে (গড়াগড়া সহ) কুলি করবে, নিঃশ্বাসের সাথে নাকে পানি নেবে এবং নাক ঝেড়ে ফেলবে, এই তিনটি কাজ তিনবার আলাদা পানি নেওয়ার মাধ্যমে করবে।

৫- এরপর সে তার মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করবে । মুখমণ্ডলের সীমানা হচ্ছে: সাধারণভাবে চুল গজানোর স্থান থেকে শুরু করে দাড়ি ও থুতনির নিচ পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে, এবং এক কান থেকে আরেক কান পর্যন্ত চওড়াভাবে।

৬- তারপর সে তার ডান হাত, তারপর বাম হাত, আঙুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে এবং কনুই ধৌতকরণের অন্তর্ভুক্ত হবে।

৭- তারপর সে তার হাত দিয়ে একবার মাথা মাসাহ করবে, দুই হাত ভিজিয়ে নিবে এবং মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনে গর্দান পর্যন্ত পৌঁছাবে, তারপর হাতদুটি সেই স্থানে ফিরিয়ে নিবে যেখান থেকে সে শুরু করেছিল। মাথা হলো সম্মুখভাগে চেহারার সীমানায় চুল গজানোর স্থান হতে পিছনের দিকে ঘাড়ের উপরের অংশ পর্যন্ত এবং ডান ও বাম দিকে দুই কানের মধ্যবর্তী স্থান।

৮- এরপর সে তার হাত দিয়ে একবার দুই কান মাসাহ করবে (মুছে নেবে)। সে তার শাহাদাত আঙুল (তর্জনী) দুই কানের গর্তে প্রবেশ করাবে, এগুলো হলো শ্রবণ ছিদ্র, আর বুড়ো আঙুল দিয়ে কানের বাইরের অংশ মুছে নেবে।

৯- তারপর সে তার ডান পা, তারপর বাম পা, পায়ের আঙ্গুল থেকে টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে, টাখনুও ধৌতকরণের অন্তর্ভুক্ত হবে। টাখনু হলো পায়ের গোছা থেকে বেরিয়ে আসা দুটি হাড়।

তিনবার ধোয়ার জায়গায় একবার ধোয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, অথবা দুইবার ধোয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাও জায়েয।

গোসল

গোসল: এটি হচ্ছে পুরো শরীরকে পবিত্র করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র ইবাদত করা। এটি প্রত্যেক এমন ব্যক্তির উপর আবশ্যক, যার ওপর জানাবাত (বড় অপবিত্রতা) আপতিত হয়েছে অথবা গোসল আবশ্যক হওয়ার অন্য কোনো কারণ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন:

﴿...وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْ...﴾

“এবং যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে যথাযথভাবে পবিত্র হও...।” [আল-মায়েদা : ৬]।

* গোসলের বিবরণ:

১- অন্তরে নিয়ত করা, মুখে উচ্চারণ না করে, বড় ধরনের নাপাকি দূর করার জন্য অথবা এমন কিছুর জন্য গোসল করা, যার জন্য গোসল করা শরী‘আতসম্মত, যেমন জুমার সালাত।

২- অতঃপর “বিসমিল্লাহ” বলবে।

৩- তারপর তিনবার কব্জি পর্যন্ত হাত ধৌত করবে।

৪- তারপর সে তার গোপনাঙ্গ ধৌত করবে।

৫- তারপর সালাতের মতো পূর্ণাঙ্গ অযু করবে।

৬- তারপর তার মাথা ধৌত করবে, পানি নিয়ে চুলের গোড়া দিয়ে তা প্রবাহিত করবে যতক্ষণ না চুলের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছায়, তারপর চুলের উপর তিনবার পানি ঢালবে।

৭- তারপর তার শরীরের পুরো অংশ ধৌত করবে।

যদি তার শরীরের কোন অংশে এমন কোন ভাঙা বা ক্ষত থাকে যার উপর পট্টি স্থাপনের প্রয়োজন হয়, তাহলে সে তার উপর পট্টি স্থাপন করবে এবং তার নীচের অংশ ধোয়ার পরিবর্তে তার উপরে মাসেহ করবে; যেহেতু পট্টির কারণে এটি ধোয়া অসম্ভব, তাই এর উপর দিয়ে মাসেহ করা যথেষ্ট হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ...﴾

“অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর...।” [আত-তাগাবুন : ১৬] এটি একটি প্রয়োজন সাপেক্ষ মাসেহ, তাই এর সীমানা এবং সময় প্রয়োজন অনুসারে নির্ধারিত হবে। কাজেই পট্টি প্রয়োজনের স্থান অতিক্রম করবে না, যদি ভাঙা বা ক্ষতস্থান সেরে যায়, তাহলে পট্টি অপসারণ করতে হবে।

যদি তার শরীরের কোন অংশে এমন কোন ভগ্নস্থান বা ক্ষত থাকে, যা ধোয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং তাতে কোন পট্টি না থাকে; তবে তা ধোয়ার পরিবর্তে পানি দিয়ে মাসেহ করবে। আর যদি মাসেহ ক্ষতিকর হয়, তাহলে তার জন্য তায়াম্মুম করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ...﴾

“অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর...।” [আত-তাগাবুন : ১৬], এ মর্মে আরো একটি আল্লাহর বাণী:

﴿...هُوَ ٱجۡتَبَىٰكُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلدِّينِ مِنۡ حَرَج...﴾

“...তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। আর তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি...।” [আল-হজ্জ :৭৮]।

এই মাসেহ- পট্টির উপর হোক বা অসুস্থ অংশের উপর - গোসলের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং তার দ্বারা পবিত্রতা সম্পূর্ণ হবে এবং ওযর দূর হওয়ার পরে পুনরায় তা ধোয়ার প্রয়োজন হবে না।

যদি সে এতটুকু পানি পায়, যা তার শরীরের কিছু অংশের জন্য যথেষ্ট হয়; তাহলে তা ব্যবহার করবে এবং বাকি অংশের জন্য তায়াম্মুম করবে।

তায়াম্মুম

তায়াম্মুম হলো: পানি না পাওয়া গেলে অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে পানি ব্যবহারের ফলে ক্ষতি হওয়ার কারণে পানি ব্যবহার করা সম্ভব না হলে, মাটি দিয়ে মুখমন্ডল ও হাত মুছে পবিত্র হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা।

এটি ছোট বা বড় নাপাকি হতে পানি দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করার বিকল্প একটি ব্যবস্থা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ...﴾

“হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত করো...” আল্লাহর এ বাণী পর্যন্ত:

﴿...وَإِن كُنتُم مَّرۡضَىٰٓ أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوۡ جَآءَ أَحَدٞ مِّنكُم مِّنَ ٱلۡغَآئِطِ أَوۡ لَٰمَسۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ حَرَجٖ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ وَلِيُتِمَّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ﴾

“... আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীর সাথে সংগত হও এবং পানি না পাও- তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। সুতরাং তা দ্বারা মুখমণ্ডলে ও হাতে মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর”। [আল-মায়েদা : ৬]।

তায়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা একটি সম্পূর্ণ পবিত্রতা যা পানি ব্যবহার করতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত অপবিত্রতা দূর করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿...وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ...﴾

”...কিন্তু তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান...” [আল-মায়েদা: ৬], এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«جُعِلَتْ لِي الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا، وَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلَاةُ فَلْيُصَلِّ».

"সমস্ত জমিন আমার জন্য সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। সুতরাং যখনই আমার উম্মতের কোন ব্যক্তির সালাতের সময় হয়ে যায়, তখন সে যেন সালাত আদায় করে নেয়।" বুখারী, তাহুর (الطَّهُور) শব্দের অর্থ হলো যা দ্বারা পবিত্রতা হাসিল হয়।5

অতএব; যদি সে নফল সালাতের জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে সে তা দিয়ে ফরয সালাত আদায় করতে পারবে। সালাতের সময় শুরু হওয়ার পূর্বেই তায়াম্মুম করা বৈধ এবং সময় শেষ হলেও তায়াম্মুম বাতিল হবে না। যদি সে ছোটখাটো নাপাকির জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে নাপাকি ব্যতীত তার তায়াম্মুম বাতিল হবে না। যদি সে বড় নাপাকির জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে বড় নাপাকি ছাড়া তার তায়াম্মুম বাতিল হবে না।

তবে ওযর চলে গেলে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই যদি সে পানি পায়, তার তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে। যদি সে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করে, তার তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে, তা ছোট বা বড় যে ধরণের নাপাকির জন্যই হোক না কেন। কাজেই যে ছোট নাপাকির জন্য ইতোপূর্বে তায়াম্মুম করেছিল এখন তার জন্য অযু করবে এবং যে বড় নাপাকির জন্য আগে তায়াম্মুম করেছিল এখন তার জন্য গোসল করবে।

আর তায়াম্মুম সহীহ হয়—যেকোনো ধরনের ভূমির উপরে, তা মাটির হোক, বালুর হোক কিংবা পাথরের; এমনকি তার সাথে সংযুক্ত একই প্রকৃতির বস্তুতেও তায়াম্মুম সহীহ, যেমন: দেয়াল,

কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«وَجُعِلَتْ لِي الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا».

"আর সমস্ত যমীনকে আমার জন্য সিজদার স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করা হয়েছে।",6

আবূ জুহাইম ইবনুল হারিছ ইবন আস-সাম্মাহ আল-আনসারী রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

«‌أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَهُ رَجُلٌ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‌حَتَّى ‌أَقْبَلَ ‌عَلَى ‌الجِدَارِ، فَمَسَحَ بِوَجْهِهِ وَيَدَيْهِ، ثُمَّ رَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ».

"এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে দেখা করে তাঁকে সালাম জানাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন না যতক্ষণ না তিনি দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাঁর মুখ ও হাত মুছলেন এবং তারপর সালামের জবাব দিলেন।" হাদীস দু’টির বর্ণনাকারী বুখারী।7

* তায়াম্মুমের বিবরণ:

অন্তরে অপবিত্রতা দূর করার নিয়ত করা, সালাত বা অনুরূপ কোন ইবাদতের জন্য যার জন্য তায়াম্মুম অনুমোদন করা হয়েছে; তারপর সে বলবে: "বিসমিল্লাহ" এবং তার দুই হাতের তালু দিয়ে একবার মাটিতে আঘাত করবে এবং তা দিয়ে মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে।

 

মোজার উপর মাসেহ করা:

"খুফফাইন" বলতে বোঝায়, যা পায়ে পরা হয় এবং তা চামড়া বা অনুরূপ জিনিস দিয়ে তৈরি করা।

”জাওরাব” বলতে বোঝায়: এমন কিছু যা পায়ে পরা হয়, সুতা ও অনুরূপ জিনিস দিয়ে তৈরি করা এবং এটি মোজা নামে পরিচিত।

* চামড়া ও কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করার বিধান:

এগুলোর উপর মাসেহ করা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আসা সুন্নাত, তাই কেউ এগুলো পরিধান করলে পা ধোয়ার জন্য এগুলো খুলে ফেলার চেয়ে এগুলোর উপর মাসেহ করা উত্তম।

এর প্রমাণ হল মুগীরা ইবনে শু'বাহ রদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস,

أنَّ النَّبيَّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ تَوَضَّأَ، قالَ المُغِيرَةُ: فأَهْوَيْتُ لِأَنْزِعَ خُفَّيْهِ، فَقَالَ: «دَعْهُمَا؛ فَإِنِّي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ»، فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করলেন, মুগীরাহ বলেন: আমি তার জুতা খুলতে হাত বাড়ালাম, কিন্তু তিনি বললেন: "এগুলো রেখে দাও; আমি এগুলো পবিত্র অবস্থায় পরিধান করেছি।" এরপর তিনি সেগুলোর উপর মাসেহ করলেন।8

মোজার উপর মাসেহ করার বৈধতা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।

আল্লাহর কিতাবের দলীল, তাঁর নিম্নের বাণীতে রয়েছে:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِ...﴾

“হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথাসমূহ মাসেহ কর এবং পাগুলো টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও...।” [আল-মায়েদা : ৬], কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿...وَأَرۡجُلَكُمۡ...﴾

“...এবং তোমাদের পাগুলো...” এতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত সাত কিরাতের দুটি বিশুদ্ধ কিরাত রয়েছে।

একটি হলো وَأَرۡجُلَكُمۡ অংশটিকে وُجُوهَكُمۡ বাক্যের সাথে সম্পৃক্ত করে। তখন দু’টি পা ধৌত করার অঙ্গভুক্ত হবে।

দ্বিতীয়টি হল وَأَرْجُلِكُمْ অংশটিকে بِرُءُوسِكُمۡ বাক্যের সাথে সম্পৃক্ত করে। তখন দু’টি পা মাসেহ করার অন্তর্ভুক্ত হবে।9

কিরাত দু’টি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, পা মাসেহ করা বা ধৌত করা যাই হোক উভয়টিই সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর পা খোলা থাকত, তখন তা ধৌত করতেন এবং যখন তা মোজা দিয়ে ঢাকা থাকত, তখন তিনি তার উপর মাসেহ করতেন।

এ ব্যাপারে সুন্নাহর প্রমাণ হল, এই বিষয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ মুতাওয়াতির। ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল বলেন: "আমার অন্তরে মাসেহ করার ব্যাপারে কোন দ্বিধা নেই। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণের কাছ থেকে এই বিষয়ে চল্লিশটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।"

একটি কবিতার উল্লেখ্যযোগ্য অংশ হল: কবির কথা:10

মুতাওয়াতির হাদীসগুলোর কিছু হল: হাদীস "যে মিথ্যা বলল" *** এবং "যে আল্লাহর জন্য ঘর তৈরি করল এবং প্রতিদান কামনা করল"

আর আল্লাহকে দেখতে পাওয়া, শাফায়াত, হাউয এবং দুটি মোজার উপরে মাসেহ করা। আর এগুলো তার মধ্যে কয়েকটি।

মোজার উপর মাসেহ করার শর্তাবলী:

মোজার উপর মাসেহ করার জন্য চারটি শর্ত আবশ্যক:

প্রথম শর্ত: পবিত্র অবস্থায় এগুলো পরিধান করা। এর প্রমাণ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুগীরা ইবনু শু'বাহকে বলা উক্তি:

«دَعْهُمَا؛ فَإِنَّنِي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ».

“এগুলো রেখে দাও; "আমি এগুলোকে পবিত্র অবস্থায় পরিধান করেছি”।11

দ্বিতীয় শর্ত: চামড়ার বা কাপড়ের মোজা পবিত্র হতে হবে। যদি এগুলো অপবিত্র হয়, তাহলে সেগুলোর উপর মাসেহ করা জায়েয নয়। এর প্রমাণ হল:

«‌أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى ذَاتَ يَوْمٍ بِأَصْحَابِهِ وَعَلَيْهِ نَعْلَانِ، فَخَلَعَهُمَا فِي أَثْنَاءِ صَلَاتِهِ، وَأَخْبَرَ أَنَّ جِبْرِيلَ أَخْبَرَهُ بِأَنَّ فِيهِمَا أَذًى أَوْ قَذَرًا».

"আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তাঁর সাহাবীদের সাথে দুটি স্যান্ডেল পরে সালাত আদায় করলেন। সালাতের মধ্যে তিনি সেগুলো খুলে ফেললেন এবং জানালেন যে, জিবরীল তাকে জানিয়েছেন যে, এগুলোর মধ্যে কিছু নোংরা বা নাপাক জিনিস লেগে ছিল।"12 এ থেকে বোঝা যায় যে, অপবিত্র স্থানে বা বস্তু সহকারে সালাত জায়েয নয়। কারণ যদি অপবিত্র বস্তুর উপর পানি দিয়ে মুছে ফেলা হয়, তাহলে যা দিয়ে মুছা হবে সেটিও অপবিত্রতায় দূষিত হয়ে যাবে, তাই এটি পবিত্রকারী হতে পারে না।

তৃতীয় শর্ত: ছোট নাপাকির ক্ষেত্রে মোজার উপর মাসেহ করতে হবে, বড় নাপাকির ক্ষেত্রে নয়, অথবা এমন কিছুর ক্ষেত্রে নয় যার জন্য গোসল করতে হয়। এর প্রমাণ হলো সাফওয়ান ইবনে আসসাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, তিনি বলেন:

«‌أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا كُنَّا سَفْرًا أَلَّا نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ إِلَّا مِنْ جَنَابَةٍ، وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ».

“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, সফরের সময় তিন দিন ও তিন রাত মোজা খুলতে হবে না, কেবল জানাবাত (বড় অপবিত্রতা) ব্যতীত, তবে মলত্যাগ, প্রস্রাব এবং ঘুমের জন্য মাসেহ করবে”।13 কাজেই মাসেহের ক্ষেত্রের ক্ষেত্রে ছোট নাপাকি হওয়া শর্ত; বড় নাপাকির ক্ষেত্রে মাসেহ করা জায়েয নয়। যা আমাদের উল্লেখকৃত হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।

চতুর্থ শর্ত: শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসেহ করতে হবে, যা একজন মুকিমের জন্য একদিন ও এক রাত এবং একজন মুসাফিরের জন্য তিন দিন ও তিন রাত। কারণ আলী ইবনু আবি তালিব রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকিমের জন্য এক দিন ও এক রাত এবং মুসাফিরের জন্য তিন দিন ও তিন রাত নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ মোজার উপরে মাসেহ করার ব্যাপারে“ মুসলিম: (১৪)।14

এই সময়কাল নাপাকির পর প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে শুরু হয় এবং মুকিমের জন্য চব্বিশ ঘন্টা এবং মুসাফিরের জন্য বাহাত্তর ঘন্টা পরে শেষ হয়। যদি আমরা ধরি যে, একজন ব্যক্তি মঙ্গলবার ফযরের সালাতের জন্য নিজেকে পবিত্র করেছেন এবং রাতে এশার সালাত পড়ার আগে পর্যন্ত পবিত্রতা বজায় রেখেছেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়েছেন, তারপর বুধবার ফযরের সালাতের জন্য উঠেছেন এবং ভোর পাঁচটায় পবিত্রতা অর্জন করেছেন; তাহলে বুধবার ভোর পাঁচটায় এই সময়কাল শুরু হবে এবং বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটায় শেষ হবে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে তিনি বৃহস্পতিবার ঠিক (ভোর) পাঁচটার আগে মাসেহ করেছেন; সে এই মাসেহের মাধ্যমে ফযরের সালাত আদায় করতে পারবে - অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ফযরের সালাত পড়তে পারবে এবং যতক্ষণ সে পবিত্র থাকে ততক্ষণ সে যা ইচ্ছা সালাত আদায় করতে পারবে। কারণ আলেমদের সবচেয়ে সঠিক মতামত অনুসারে, সময় পরিপূর্ণ হলে অযু বাতিল হয় না। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্রতার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেননি, বরং মাসেহের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেছেন। তাই সময়কাল পূর্ণ হলে মাসেহ নেই, তবে যদি সে এরপরে পবিত্র অবস্থায় থাকে, তাহলে তার পবিত্রতা বজায় থাকবে। কারণ এই পবিত্রতা শরয়ী প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং শরয়ী প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জিনিস শরয়ী প্রমাণ ব্যতীত বাতিল হয় না। আর এমন কোনও প্রমাণ নেই যে মাসেহের সময়কাল শেষ হওয়ার পরে অযু বাতিল হয়ে যায়। অধিকন্তু মূলনীতি হচ্ছে: পূর্ববর্তী অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে যতক্ষণ না তার পরিবর্তন স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। তাই মোজার উপর মাসেহ করার জন্য এই শর্তগুলি আবশ্যক। কিছু বিদ্বান আরো কতিপয় শর্ত উল্লেখ করেছেন এবং এর মধ্যে কিছু রয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

[আল-ফাতিহা: ১-৭],

[আল-ইখলাস: ১], [আল-ফালাক : ১], [আন-নাস: ১]।

[আল-ইনশিকাক: ১],

[আল-কাফিরূন: ১] [আল-ইখলাস: ১]

মোজা, পাগড়ি এবং ব্যান্ডেজে মাসেহ করা সম্পর্কে একগুচ্ছ প্রশ্ন

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। আমি আমাদের নবী মুহাম্মদ, তার পরিবারবর্গ, সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করবে তাদের উপর সালাত ও সালাম পাঠ করছি।

অতঃপর; মোজা, পাগড়ি এবং ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করার অধ্যায়ে আমাকে যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছিল আমি তার উত্তর শুনেছি। এটি আমার রেকর্ডিংয়ের উত্তরের সাথে মিল ছিল এবং আমি এতে কিছু ছোটখাটো সংশোধন করেছি। যারা এটি মুদ্রণ করতে চান তাদের জন্য আমি এটি মুদ্রণের অনুমতি দিয়েছি, এই শর্তে যে তারা বিশুদ্ধতার দিকে মনোযোগ দেবেন এবং তারা নিজস্ব বা অন্য কারো জন্য কপিরাইট সংরক্ষণ করবেন না।

আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন সকলকে সাফল্য এবং কবুলিয়াত দান করেন।

লেখক

মুহাম্মাদ সালিহ আল-উসাইমীন

তারিখ ১৯/০৫/১৪১০ হি.

মোজার উপর মাসেহ করা

প্রশ্ন (১): কিছু ফকীহ যে শর্ত দিয়েছেন যে, (যে জোড়া মোজা ব্যবহার করা হবে তা) অবশ্যই ধোয়ার ফরজ অঙ্গ আবৃতকারী হতে হবে- এর যথার্থতা কী?

উত্তর: এই শর্তটি সঠিক নয়; কারণ এর কোন প্রমাণ নেই; চামড়ার মোজা বা কাপড়ের মোজার নাম যতক্ষণ অবশিষ্ট থাকবে, ততক্ষণ এর উপর মাসেহ করা বৈধ হবে; কারণ, সুন্নাহতে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি এসেছে সাধারণভাবে (মুতলাকভাবে)। আর শরীয়ত যখন কোনো বিষয়ে সাধারণভাবে কথা বলে, তখন তা সীমিত করার অধিকার কারও নেই, যতক্ষণ না শরীয়তের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট দলীল বা শরয়ী নীতিমালা পাওয়া যায়, যা সীমাবদ্ধতা আরোপ করার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

অতএব, ছেঁড়া মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয এবং পাতলা মোজার উপর মাসেহ করাও জায়েয; কারণ মোজার উদ্দেশ্য ত্বক ঢেকে রাখা নয়, বরং মোজার উদ্দেশ্য পা উষ্ণ রাখা এবং পায়ের উপকারে আসা।

আর মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে মূলত এই কারণে যে, তা খুলে ফেলা কষ্টসাধ্য। আর এই ক্ষেত্রে পাতলা মোজা ও ভারী মোজার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই, অথবা ছেঁড়া মোজা ও ভালো মোজার মধ্যেও কোন পার্থক্য নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যতক্ষণ মোজার নাম অবশিষ্ট থাকবে; এর উপর মাসেহ করা জায়েয হবে।

প্রশ্ন (২): একজন ব্যক্তি তায়াম্মুম করলেন এবং মোজা পরিধান করলেন; এরপরে যদি সে পানি পায়, তবে তার জন্য কি মোজার উপরে মাসেহ করা জায়েয হবে? জ্ঞাতব্য যে, সে পবিত্র অবস্থায় মোজাদ্বয় পরিধান করেছে।

উত্তর: যদি পবিত্রতা তায়াম্মুমের পবিত্রতা হয়, তাহলে মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয হবে না; কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«فَإِنَّنِي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ».

"কারণ আমি পা-দুটি পবিত্র অবস্থায় প্রবেশ করিয়েছি”,15 আর তায়াম্মুমের পবিত্রতা পায়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং তা মুখমন্ডল ও হাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

এর সাথে আরো রয়েছে: যদি কোন ব্যক্তির কাছে পানি না থাকে অথবা অসুস্থ থাকে এবং এ কারণে অযুর জন্য পানি ব্যবহার করতে না পারে; সে পবিত্র না হলেও মোজা পরিধান করবে এবং তার উপর অবস্থান করবে নির্দিষ্ট সময়সীমা ছাড়াই, যতক্ষণ না সে পানি পায় যদি পানিহীন থাকে, অথবা যতক্ষণ না অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠে, যদি অসুস্থ থাকে। কারণ তায়াম্মুমের পবিত্রতার সাথে পায়ের কোন সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন (৩): নিয়ত কি ওয়াজিব, অর্থাৎ: যদি সে চামড়ার বা কাপড়ের মোজা পরার ইচ্ছে করে, তখন কি সে মোজার উপর মাসেহ করার নিয়ত করবে এবং একইভাবে নিয়ত করবে যে সে একজন মুকিম বা মুসাফির হিসেবে মাসেহ করবে, নাকি এটা ওয়াজিব নয়?

উত্তর: এখানে নিয়ত করা আবশ্যক নয়। কারণ এটি এমন একটি কর্ম যার বিধান কেবল অস্তিত্বে থাকার উপর সীমাবদ্ধ, তাই এর জন্য আলাদা করে নিয়তের প্রয়োজন নেই। যেমন কোন ব্যক্তির পোশাক পরিধান করা; তখন এই শর্ত নেই যে, তাকে সালাতে সতর ঢাকার নিয়ত করতে হবে। ঠিক অনুরূপভাবে মোজা পরার সময় তার উপর মাসেহ করার নিয়ত থাকা শর্ত নয়, অনুরূপভাবে সময়ের নিয়ত করাও শর্ত নয়; বরং যদি সে মুসাফির হয়; তার জন্য তিন দিন, সে নিয়ত করুক বা না করুক। আর যদি মুকিম হয়; তার জন্য এক দিন আর এক রাত; সে নিয়ত করুক বা না করুক।

প্রশ্ন (৪): কতটুক দূরত্ব বা কোন সফরে তিন দিন ও তিন রাত মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি আছে?

উত্তর: যে সফরে সালাত কসর করা জায়েয, সেই সফরেই মাসেহের সময়কাল তিন দিন ও তিন রাত। কারণ আমরা সাফওয়ান ইবনু আসসালের যে হাদীসটি উল্লেখ করেছি তাতে বলা হয়েছে:

«إِذَا كُنَّا سَفْرًا».

"যখন আমরা সফরে থাকতাম।”,16 কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি সফরে থাকে এবং সালাত কসর করে; সে তিন দিন মাসেহ করতে পারবে।

প্রশ্ন (৫): যদি কোন মুসাফির মুকিম হয় (ফিরে আসে) অথবা কোন মুকিম সফর শুরু করে, যে ইতোপূর্বে মোজার উপর মাসেহ শুরু করেছে, তার মাসেহের সময়কাল কীভাবে গণনা করা হবে?

উত্তর: যদি সে মুকিম অবস্থায় মাসেহ করা শুরু করে থাকে, তারপর ভ্রমণ করে; তাহলে সবচেয়ে সঠিক মত অনুসারে মুসাফিরের সময়কাল সম্পন্ন করবে। আর যদি সে মুসাফির হয় এবং তারপর ফিরে আসে, তাহলে সে মুকিমের মেয়াদকাল সম্পন্ন করবে। এটি সবচেয়ে সঠিক মত।

কিছু আলেম বলেন, যদি কেউ বাসায় মাসেহ করে তারপর ভ্রমণ করে, তাহলে সে বাসায় থাকা ব্যক্তির ন্যায় মাসেহ সম্পন্ন করবে। কিন্তু আমরা প্রথমে যা বলেছি তাই প্রণিধানযোগ্য মত; যেহেতু এই লোকটির ভ্রমণের আগে তার মাসেহ করার সময়কাল কিছুটা বাকি ছিল, তারপর তিনি ভ্রমণ করলেন। তার উপর এটা সত্য যে, তিনি একজন মুসাফির যারা তিন দিন মোজার উপর মাসহে করতে পারে।

প্রশ্ন (৬): কেউ যদি মাসেহ করার শুরুকাল ও এর সময় সম্পর্কে সন্দেহ করে, তবে তার করণীয় কী?

উত্তর: এই ক্ষেত্রে সে নিশ্চয়তার উপর ভিত্তি করবে। যদি তার সন্দেহ হয়: সে কি দুপুরের সালাতের জন্য মাসেহ করেছিল, নাকি আসরের সালাতের জন্য? তাহলে তিনি আসরের সালাত থেকে মাসেহ করার সময় শুরু ধরে মাসেহ করবেন; কারণ মূল হল মাসেহ না করা।

এই নীতির দলিল হল এই সূত্র: (الأصْلُ بَقَاء مَا كَان عَلى مَا كَان) "মূল অবস্থা যেমন ছিল, তেমনই বহাল থাকে" এবং এই সূত্র: (الأصْلُ العَدَم) "মূল হল না-থাকা (অস্তিত্বহীনতা)"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একজন ব্যক্তি অভিযোগ করল যে, সে তার সালাতে (বাতকর্মের মত) কিছু জিনিস অনুভব করে, তখন তিনি বললেন:

«لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا، أَوْ يَجِدَ رِيحًا».

“শব্দ শোনা অথবা গন্ধ না পাওয়ার আগ পর্যন্ত (সালাত) ছেড়ে যাবে না”।17

প্রশ্ন (৭): এক ব্যক্তি মাসেহের সময় শেষ হওয়ার পর মাসেহ করলেন, তারপর সালাত পড়লেন। তার সালাতের হুকুম কী?

উত্তর: যদি সে মাসেহের সময় শেষ হওয়ার পরে মাসেহ করে - সে মুকিম হোক বা মুসাফির - তাহলে এই পবিত্রতার সাথে সে যা সালাত পড়েছে তা বাতিল। কারণ তার ওযু বাতিল; যেহেতু মাসেহের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে, তাই তাকে আবার পূর্ণ ওযু করতে হবে, পা ধুয়ে ফেলতে হবে এবং সময় শেষ হওয়ার পর মাসেহ করা ওযু দিয়ে যে সালাতগুলো আদায় করেছে, তা আবার পড়তে হবে।

প্রশ্ন (৮): যদি কোন ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় মোজা খুলে ফেলে, তারপর পবিত্রতা বাতিল হওয়ার আগে আবার মোজা পরে, তাহলে কি তার উপর মাসেহ করা জায়েয হবে?

উত্তর: যদি সে তার মোজা খুলে ফেলে এবং ওযুর অবস্থায় আবার পরে, যদি এটি প্রথম ওযু হয় - অর্থাৎ, পরার পরে তার অযু নষ্ট হয়নি - তাহলে আবার মোজা পরা এবং ওযু করার সময় তার উপর মাসেহ করা কোন দোষণীয় নয়।

কিন্তু যদি এই ওযু এমন ওযু হয় যেখানে সে তার মোজার উপর মাসেহ করেছে; যদি সে এটি খুলে ফেলে, তাহলে তাকে এটি পরতে বা তার উপর মাসেহ করতে দেওয়া যাবে না। কারণ এটি পানি দিয়ে পবিত্র হওয়ার পর পরতে হয়, অথচ এটি হল মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা। আলেমদের কথা থেকে এটাই জানা যায়।

কিন্তু যদি কোন আলেম বলেন যে, যদি তিনি পবিত্র অবস্থায় পুনরায় মোজা পরিধান করেন - যদিও তা মাসেহ করার পবিত্রতা হয় - তাহলে যতক্ষণ সময়কাল থাকে ততক্ষণ তিনি মাসেহ করতে পারবেন, তাহলে এটি একটি শক্তিশালী বক্তব্য; কিন্তু আমি জানি না যে কেউ এটি বলেছেন, তাই আমার এটি না বলার কারণ হল: আমি এমন কাউকে জানি না যিনি এটি বলেছেন। যদি কোন আলেম একথা বলে থাকেন; আমার মতে এটা সঠিক; যেহেতু মাসেহ করার পবিত্রতা হলো পরিপূর্ণ পবিত্রতা, তাই বলা উচিত যে, তিনি পানির পবিত্রতার পর যা পরেছেন তার উপর যখন মাসেহ করা বৈধ, তাহলে মাসেহ করার পবিত্রতার পর যা পরবেন তার উপরও মাসেহ করা বৈধ হবে, কিন্তু আমি কাউকে এটা বলতে দেখিনি।

প্রশ্ন (৯): তাহলে আমরা বলব না যে মোজা খুলে ফেলার ফলে মাসেহ বাতিল হয়ে যায়?

উত্তর: যদি সে মোজা খুলে ফেলে, তাহলে তার পবিত্রতা (ওযু ) বাতিল হবে না, তবে তার মাসেহ বাতিল হবে। যদি সে আবার এগুলো পরে এবং তার ওযু ভেঙ্গে যায়, তাহলে তাকে মোজা খুলে পা ধুতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটা জেনে রাখা যে, আহলে-ইলমদের বক্তব্য থেকে আমরা যা শিখেছি, সে অনুযায়ী এমন পবিত্রতায় মোজা পরিধান করতে হবে যেখানে পা ধোয়া হয়েছে।

প্রশ্ন (১০): একজন ব্যক্তি প্রথমবার চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করলেন এবং দ্বিতীয়বারে মোজা খুলে ফেললেন এবং কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করলেন, তার মাসেহ করা বৈধ, নাকি তাকে পা ধোয়া বাধ্যতামূলক?

উত্তর: এ বিষয়ে মতভেদ আছে। কিছু আলেমের মতে, যদি কেউ উপরের বা নীচের মোজার যেকোনো একটির উপর মাসেহ করে, তাহলে মাসেহের বিধান তার উপর প্রযোজ্য হবে, অন্যটিতে স্থানান্তরিত হবে না।

তাদের কেউ কেউ বলেন, যতক্ষণ মাসেহের সময়কাল বাকি থাকে ততক্ষণ দ্বিতীয়টিতে স্থানান্তর করা জায়েয। উদাহরণস্বরূপ: যদি সে চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করে, তারপর তা খুলে ফেলে এবং সে ওযু করার ইচ্ছে করে; সবচেয়ে সঠিক মত অনুসারে, সে কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করতে পারেন। অনুরূপভাবে, যদি সে কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করে, তারপর তার উপর অন্য কাপড় বা চামড়ার মোজা পরে এবং উপরের মোজার উপর মাসেহ করে; সবচেয়ে সঠিক মত অনুসারে, যতক্ষণ পর্যন্ত সময়কাল বাকি থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এতে কোনও অসুবিধা নেই। তবে সময়কাল গণনা করা হবে প্রথম মাসেহ করা থেকে, দ্বিতীয় মাসেহ থেকে নয়।

প্রশ্ন (১১): মানুষ প্রায়ই মাসেহ করার সঠিক পদ্ধতি এবং মাসেহের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে।

উত্তর: মাসেহ করার পদ্ধতি: তার হাত পায়ের আঙুলের ডগা থেকে কেবল পায়ের গোছা পর্যন্ত মুছবে, অর্থাৎ মোজার উপরের অংশটিই মাসেহ করবে এবং উভয় হাত দিয়ে উভয় পায়ে মাসেহ করবে। অর্থাৎ একই সাথে ডান হাতে ডান পা এবং বাম হাতে বাম পা মুছবে, ঠিক যেমন কান মুছতে হয়; কারণ এটাই সুন্নাহর বাহ্যিক অর্থ। মুগীরাহ ইবনু শু'বাহ -রদিয়াল্লাহু আনহুর কথা অনুসারে: "তিনি উভয়ের উপর মাসেহ করলেন।",18 তিনি বলেননি: "তিনি ডান পাশ দিয়ে শুরু করেছেন," বরং তিনি বলেন: "তিনি উভয়ের উপর মাসেহ করেছেন।" সুতরাং এটাই সুন্নাহর বাহ্যিক অর্থ। হ্যাঁ, যদি ধরে নেওয়া হয় যে তার একটি হাত কাজ করে না, তাহলে সে বাম পাশের আগে ডান পাশ দিয়ে শুরু করবে।

অনেকে দুই হাত দিয়ে ডান পায়ের উপর আবার দুই হাত দিয়ে বাম পায়ের উপর মাসেহ করেন। আমার জানা মতে এর কোন ভিত্তি নেই। বরং, আলিমগণ বলেন: ডান হাত দিয়ে ডান পা আর বাম হাত দিয়ে বাম পা মাসেহ করবে।

প্রশ্ন (১২): আমরা দেখেছি কিছু মানুষ নিচে ও উপরে মাসেহ করেন, এই লোকদের মাসেহের হুকুম কী? আর তাদের সালাতের হুকুম কী?

উত্তর: তাদের সালাত সহীহ এবং তাদের ওযুও সহীহ, তবে তাদের সচেতন করা উচিত যে নিচের দিকে মাসেহ করা সুন্নাতের অংশ নয়। “সুনান” গ্রন্থে আলী ইবনু আবি তালিব রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন: “দ্বীনের মাপকাঠি যদি রায়ের (মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার) উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে নীচের (তলার) দিক মাসেহ্ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ মাসেহ্ করতে দেখেছি”।19 এর অর্থ হল- বৈধ কেবল উপরের অংশটি মাসেহ করা।

প্রশ্ন (১৩): ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমার এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা কী: "রাসূল সূরা মায়েদা (নাযিলের) পরে আর মাসেহ করেননি।”।20 আর আলী রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নিম্নের উক্তিটির ব্যাখ্যা কী? "মোজার বিধানের উপর কিতাব (কুরআন) অগ্রগামী হয়েছে।”?21

উত্তর: বক্তব্য দু’টি তাদের কাছ থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত কিনা তা আমি জানি না। আমি আগেই উল্লেখ করেছি: আলী ইবনু আবি তালিব রদিয়াল্লাহু আনহু তাদের মধ্যে ছিলেন যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মাসেহ করার হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তার মৃত্যুর পরে সেগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং তিনি বয়ান করেছেন যে রাসূল এর জন্য একটি সময় নির্ধারণ করেছেন22। এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর পর্যন্ত তার হুকুম প্রতিষ্ঠিত ছিল। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর তা মানসূখ বা রহিত হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই।

প্রশ্ন (১৪): মোজার উপর মাসেহ করার হুকুম কি পুরুষদের মতো মহিলাদের জন্যও প্রযোজ্য? এতে কি কোন পার্থক্য আছে?

উত্তর: এই ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একটি নিয়ম জানা উচিত, তা হল: "মূলনীতি হল পুরুষদের জন্য যা প্রতিষ্ঠিত, তা মহিলাদের জন্যও প্রতিষ্ঠিত এবং মহিলাদের জন্য যা প্রতিষ্ঠিত, তা পুরুষদের জন্যও প্রতিষ্ঠিত, যদি না তাদের ভিন্নতার দলিল থাকে।"

প্রশ্ন (১৫): মোজা সম্পূর্ণ বা আংশিক খোলা হলে তার বিধান কী—যেমন কেউ নিজের পা চুলকানোর জন্য, অথবা পায়ে লেগে থাকা ছোট পাথর ইত্যাদি অপসারণ করার জন্য তা খোলে?

উত্তর: যদি সে মোজার নিচে দিয়ে হাত দাখিল করে; এতে কোনও দোষ নেই এবং কোনও সমস্যা নেই। তবে, যদি সে এটি খুলে ফেলে; তখন বিবেচনা করা হবে: যদি সে মোজার অল্প অংশ খুলে ফেলে; এতে কোন ক্ষতি নেই। আর যদি সে অনেকটা অংশ খুলে ফেলে যাতে পায়ের বেশিরভাগ অংশ দৃশ্যমান হয়; তখন ভবিষ্যতে এটির উপর মাসেহ করা বাতিল হয়ে যাবে।

প্রশ্ন (১৬): সাধারণ মানুষের মধ্যে এটা সুপরিচিত যে, তারা কেবল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য মোজার উপর মাসেহ করে এবং তারপর আবার তা খুলে পরিধান করে।

উত্তর: হ্যাঁ, এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে সুপরিচিত। তারা মনে করে যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বেশি মাসেহ করা যায় না, কিন্তু এটা ঠিক নয়। বরং, সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এক দিন ও এক রাত, অর্থাৎ সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ুক বা তার বেশি, এক দিন ও এক রাত ধরে মাসেহ করতে পারবে।

বস্তুত সময়কাল মাসেহ করা থেকে শুরু হয়, যেমনটি আমরা আগে উল্লেখ করেছি। তিনি দশটি বা তার বেশি সালাতও পড়তে পারেন। যদি কেউ সোমবার ফজরের সালাতের জন্য মোজা পরেন আর মঙ্গলবার রাতে ঘুমানো পর্যন্ত পবিত্র থাকেন, তারপর মঙ্গলবার ফজরের সালাতের জন্য প্রথমবার মোজার উপর মাসেহ করেন, তাহলে তিনি বুধবার ফজরের সালাত পর্যন্ত মাসেহ করতে পারেন। এভাবে তিনি সোমবার ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব এবং এশার সালাত মোজা পরেই আদায় করলেন। এই সময়গুলো তার জন্য গণনা করা হবে না। কারণ এগুলো ছিল মাসেহ করার আগে। মঙ্গলবার তিনি ফজরের সালাত আদায়ের জন্য মাসেহ করলেন, যোহর আদায় করলেন ও মাসেহ করলেন, আসর আদায় করলেন ও মাসেহ করলেন, মাগরিব আদায় করলেন ও মাসেহ করলেন এবং এশা আদায় করলেন ও মাসেহ করলেন। একইভাবে, তিনি বুধবারের সালাতের জন্য মাসেহ করতে পারবেন যদি তিনি সময়কাল শেষ হওয়ার আগে মাসেহ করেন, যেমন মঙ্গলবার ফজরের সালাতের জন্য পাঁচটায় মাসেহ করলেন এবং বুধবার পৌনে পাঁচটায় মাসেহ করলেন এবং বৃহস্পতিবার রাতে ‘এশার’ সালাত পড়া পর্যন্ত পবিত্রতা বজায় রাখলেন। এখানে, এই অযু দিয়ে তিনি বুধবার ফজরের সালাত এবং যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার সালাত আদায় করলেন, তাই তিনি যখন থেকে মোজা পরেছেন তখন থেকে পনেরোটি সালাত আদায় করেছেন। কারণ তিনি সোমবার ফজরের সালাতের জন্য এটি পরেছেন এবং পবিত্রতা বজায় রেখেছেন, তিনি মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় ফজরের সালাতের জন্য মাসেহ করেছেন এবং বুধবার পৌনে পাঁচটায় ফজরের সালাতের জন্য মাসেহ করেছেন এবং এশার সালাত পড়ার আগে পর্যন্ত ওযু ধরে রেখেছেন। ফলে তিনি পনেরোটি সালাত আদায় করতে পারেন।

প্রশ্ন (১৭): যদি কোন ব্যক্তি ওযু করে মোজার উপর মাসাহ করে এবং মাসেহের সময়কালের ভেতর যেমন আসরের সালাতের আগে মোজা খুলে ফেলে, তাহলে কি সে এভাবেই সালাত পড়বে এবং তার সালাত কি সহীহ, নাকি মোজা খুলে ফেলার ফলে তার ওযু নষ্ট হয়ে যায়?

উত্তর: আলেমদের একাধিক মত হতে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া এবং একদল আলেম -আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন- কর্তৃক নির্বাচিত সবচেয়ে সঠিক মত হল: মোজা খুলে ফেলার কারণে ওযু বাতিল হবে না, অতএব কেউ যদি ওযু অবস্থায় মোজা পরে থাকে এবং তার উপর মাসেহ করে, তারপর তা খুলে ফেলে- তাহলেও তার ওযু ভঙ্গ হবে না। কারণ যখন সে মোজার উপর মাসেহ করেছিল তখন শরীয়তের দলিল অনুসারে তার ওযু পূর্ণ হয়েছিল। কাজেই যখন মোজা খুলে ফেলল তখন শরীয়তের দলিলের দাবি অনুযায়ী তার পবিত্রতা বাকি থাকবে এবং শরীয়তের দলিল ছাড়া ভঙ্গ হবে না। আর মাসেহ করা চামড়া বা কাপড়ের মোজা খুলে ফেললে ওযু ভেঙ্গে যাবে এই মর্মে কোন দলিল নেই। এর উপর ভিত্তি করে তার ওযু বহাল থাকবে। তবে যদি সে পরে মোজাটি খুলে আবার পরে এবং ভবিষ্যতে এর উপর মাসেহ করতে চায়; তখন পারবে না, আলিমদের কথা থেকে আমি যতদূর জানতে পেরেছি।23

পাগড়ীর উপর মাসেহ করা।

প্রশ্ন (১৮): পাগড়ির উপর মাসেহ করা কি জায়েয? এর সীমা কতটুকু?

উত্তর: পাগড়ির উপর মাসেহ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের একটি অংশ। অতএব, এর উপর মাসেহ করা জায়েয। সম্পূর্ণ পাগড়ি অথবা এর বেশিরভাগ অংশে মাসেহ করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে মাথার দৃশ্যমান অংশ যেমন কপাল, মাথার পার্শ্বদেশ এবং কানের উপরও মাসেহ করা সুন্নাহ।

প্রশ্ন (১৯): পাগড়ি কি পুরুষের রোমাল (শেমাগ) এবং নারীর মাথার আচ্ছাদন অন্তর্ভুক্ত করে?

উত্তর: পুরুষের রোমাল (শেমাগ) এবং টুপি মোটেও পাগড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে শীতের দিনে মাথা এবং কান ঢেকে রাখা টুপি এবং যা গলার নীচে পেঁচানো থাকে এমন টুপির ক্ষেত্রে বলা যায় এটি পাগড়ির মতো। এটি অপসারণ করা কঠিন বলে তার উপর মাসেহ করা যাবে।

নারীদের ক্ষেত্রে ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহর সুপরিচিত মতানুসারে, যদি তাদের ওড়না তাদের গলার নীচ দিয়ে জড়িয়ে থাকে, তাহলে তার উপর মাসাহ করবে। কারণ এটি কতিপয় সাহাবীদের স্ত্রীরা বর্ণনা করেছেন।24

প্রশ্ন (২০): তারবুশ (ফেজ টুপি), যা মাথার উপর পরা হয় এবং ঘাড়ের সাথে সংযুক্ত হয়। এর উপর কি মাসেহ করা যাবে?

উত্তর: স্পষ্ট কথা হচ্ছে: যদি তারবুশ অপসারণ করা কঠিন না হয়; এর উপর মাসেহ করা জায়েয নয়। কারণ এটি কিছু দিক থেকে টুপির মতো। মূলনীতি হল মাথা মাসেহ করা ওয়াজিব যতক্ষণ না ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট হয় যে এটি এমন জিনিস যার উপর মাসেহ করা বৈধ।

ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করা

প্রশ্ন (২১): ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করার বিধান কী এবং এর অর্থ কী? কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এর বৈধতার প্রমাণ কী?

উত্তর: প্রথমত: আমাদের জানতে হবে ব্যান্ডেজ কী?

ব্যান্ডেজের মূল অর্থ হল: ফ্র্যাকচার (দেহের ভাঙ্গা অংশ) ঠিক করতে যা ব্যবহার করা হয়। ফকীহদের পরিভাষায় এর অর্থ হল: যা প্রয়োজনের কারণে পবিত্রতার স্থানে লাগানো হয়, যেমন: ফ্র্যাকচারের উপর প্লাস্টার লাগানো, ক্ষতের উপর পট্টি লাগানো, পিঠের ব্যথার উপর পট্টি লাগানো, অথবা অনুরূপ কোন কিছু। ওযুর সময় ধোয়ার পরিবর্তে এর উপর মাসেহ করা যথেষ্ট হবে।

যদি আমরা ধরে নিই যে, ওযু করা ব্যক্তির বাহুতে এমন একটি ব্যান্ডেজ আছে যা তার প্রয়োজন; সে ধোয়ার পরিবর্তে এর উপর মাসেহ করবে এবং এই পবিত্রতা পরিপূর্ণ পবিত্রতা, অর্থাৎ যদি এই ব্যক্তি এই পট্টি বা প্লাস্টার সরিয়ে ফেলে, তবে তার পবিত্রতা বজায় থাকবে এবং বাতিল হবে না। কারণ এটি শরয়ী বিধান মতে সম্পন্ন হয়েছে এবং পট্টি অপসারণ করলে পবিত্রতা বাতিল হয়ে যায় এমন কোনও প্রমাণ নেই।

ব্যান্ডেজের বিষয়ে এমন কোনও প্রমাণ নেই যা বিরোধিতা থেকে মুক্ত; বরং, এতে দুর্বল হাদীস রয়েছে যা কিছু আলিম গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে এর সামগ্রিকতা এটিকে দলিলের স্তরে উন্নীত করে।

কিছু আলিম বলেছেন যে, এটি এতটাই দুর্বল যে এর উপর নির্ভর করা যায় না। এরাও আবার ভিন্নতা পোষণ করেছেন, কেউ বলেছেন: ব্যান্ডেজের স্থানটি পবিত্র করার প্রয়োজন নেই। কারণ সে এটা করতে অক্ষম। আবার কেউ বলেছেন: বরং, তার উচিত এর জন্য তায়াম্মুম করা, তার উপর মাসেহ করা নয়।

এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ব্যতিরেকে নীতিমালার নিকটতম মতামত এই যে, তিনি মাসেহ করবেন এবং তায়াম্মুমের পরিবর্তে এই মাসেহই তার জন্য যথেষ্ট হবে, তায়াম্মুম প্রয়োজন নেই। এই ক্ষেত্রে আমরা বলি: যদি পবিত্রতার (ওযুর) অঙ্গগুলিতে ক্ষত থাকে, তাহলে এর কয়েকটি স্তর রয়েছে:

প্রথম স্তর: যদি এটি উন্মুক্ত থাকে এবং ধোয়ার ফলে এর ক্ষতি না হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই এটি ধুতে হবে।

দ্বিতীয় স্তর: যদি এটি উন্মুক্ত থাকে এবং মাসেহ না করে ধোয়ার কারণে ক্ষতি হতে পারে, তাহলে এই স্তরে তার জন্য এটি না ধুয়ে মাসেহ করা ওয়াজিব।

তৃতীয় স্তর: যদি এটি খোলা থাকে এবং ধোয়া ও মাসেহ করা ক্ষতিকারক হয়, তাহলে এই ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা উচিত।

চতুর্থ স্তর: এটি একটি ব্যান্ডেজ বা অনুরূপ কিছু দিয়ে আবৃত যা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে সে এই আবরণের উপর মাসেহ করবে এবং তা অঙ্গটি ধোয়ার পরিবর্তে যথেষ্ট হবে।

প্রশ্ন (২২): প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যান্ডেজ ব্যবহার করলে কি তার উপর মাসেহ করার কোনও শর্ত আছে?

উত্তর: শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময়ই ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করা যায়। কাজেই প্রয়োজন পরিমাণ এটি ব্যবহার করা আবশ্যক। প্রয়োজন কেবল ব্যথা“ বা ক্ষতের স্থানে নয়, বরং এই পট্টি বা এই প্লাস্টারটি যতটুকু অংশে প্রয়োজন হবে তা সবই প্রয়োজন বলে বিবেচিত হবে।

প্রশ্ন (২৩): এর অর্থ কি গজ এবং অন্যান্য পেঁচানো কাপড় অন্তর্ভুক্ত করে?

উত্তর: হ্যাঁ, তা অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে জানা উচিত যে ব্যান্ডেজ মোজার উপর মাসেহের মতো নয় যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ। বরং, যতক্ষণ এটি রাখার প্রয়োজন হয়, ততক্ষণ সে এর উপর মাসেহ করতে পারবে। একইভাবে, ছোট-বড় সকল প্রকার নাপাকির ক্ষেত্রে তার উপর মাসেহ করতে পারবে, মোজার বিপরীত যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়, তাহলে সে ওযুর সময় যেমন মাসেহ করে, তেমনি করে গোসলের সময় মাসেহ করবে।

প্রশ্ন (২৪): ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে কীভাবে মাসেহ করবে? পুরো ব্যান্ডেজে মাসেহ করবে, নাকি কিছু অংশে মাসেহ করবে? বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর: হ্যাঁ, পুরো ব্যান্ডেজে মাসেহ করবে। কারণ মূলনীতি হলো, বিকল্প জিনিসের বিধান মূল জিনিসের মতোই, যদি না সুন্নাহ তার বিপরীত বলে। আর এখানে মাসেহ ধোয়ার বিকল্প। ধোয়ার সময় যেমন পুরো অঙ্গ ধোয়া ওয়াজিব, তেমনি মাসেহের সময়ও পুরো অঙ্গ মাসেহ করা ওয়াজিব। তবে মোজার উপর মাসেহ করা হল একটি রুখসত (ছাড়), সুন্নাহতে এসেছে যে, এর কিছু অংশ মাসেহ করাই যথেষ্ট।

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: সালাত

সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত

সালাতের বিবরণ

সাহু সেজদা

তিলাওয়াতের সেজদা

মুসাফিরের সালাত ও সিয়াম

অসুস্থতা এবং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে পবিত্রতা হাসিল করবে, সালাত আদায় করবে এবং সিয়াম রাখবে?

নফল সালাত

নিষিদ্ধ সময়সমূহ

সালাত ত্যাগকারীর বিধান

তাওবা

সালাত

* সালাতের পরিচয়:

সালাত হলো দাঁড়িয়ে, বসে, রুকু করে এবং সিজদা করে বিশেষ নিয়মে যিকির সহ আল্লাহর ইবাদত করা। আর অবশ্যই সালাতে প্রবেশের আগে পূর্বশর্তগুলো পূরণ করতে হবে, যেমন পবিত্রতা, সতর ঢেকে রাখা, সালাতের সময় শুরু হওয়া (যদি এটি সময়ের সাথে নির্ধারিত সালাত হয়), ইত্যাদি।

সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত:

সালাত: এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় এবং ঈমানের দুটি সাক্ষ্যের পরে এটি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যে কেউ এর ফরয হওয়া অস্বীকার করে সে কাফের; কারণ সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুসলিমদের ঐকমত্যকে অস্বীকারকারী।

আর যে ব্যক্তি এর ফরয হওয়া স্বীকার করে, কিন্তু এর ব্যাপারে শিথিলতা করল এবং সালাত পড়ল না, তার হুকুম সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে সঠিক মত হলো, সে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বহিস্কৃত কাফির।

সালাত হলো বান্দা এবং তার রবের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى يُنَاجِي رَبَّهُ.

“তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপনে কথা বলে”।25 হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

«قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ، وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ، فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ2 قَالَ اللهُ تَعَالَى: حَمَدَنِي عَبْدِي. وَإِذَا قَالَ: ﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ3 قَالَ اللهُ تَعَالَى: أَثْنَى عَلَيَّ عَبْدِي. وَإِذَا قَالَ: ﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ4 قَالَ: مَجَّدَنِي عَبْدِي. فَإِذَا قَالَ: ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ5 قَالَ: هَذَا بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي، وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ. فَإِذَا قَالَ: ﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ 6 صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ7 قَالَ: هَذَا لِعَبْدِي، وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ».

“আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে, (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য), আল্লাহ তা’আলা তখন বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, (তিনি অতিশয় দয়ালু ও করুণাময়); আল্লাহ তা’আলা বলেন: বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, (তিনি বিচার দিনের মালিক), তখন আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। সে যখন বলে: (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি) তখন আল্লাহ বলেন: এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। যখন সে বলে, (আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন; তাদের পথে যাদেরকে আপনি নি’আমাত দান করেছেন, তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে; তখন আল্লাহ বলেন: এসবই আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়”।26

সালাত হলো ইবাদতের একটি বাগান, যেখানে রয়েছে নয়ন জুড়ানো সর্বপ্রকার ইবাদতের সমন্বয়। তাকবীরের মাধ্যমে সালাত শুরু হয়, দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মুসল্লি আল্লাহর কালাম পাঠ করে, রুকুতে সে আল্লাহর প্রশংসা করে, রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়ে সে আল্লাহর প্রশংসায় পরিপূর্ণ করে, সিজদায় সে আল্লাহর উচ্চ মহিমা বর্ণনা করে এবং তাঁর কাছে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা করে এবং দোআ ও তাশাহহুদের জন্য রয়েছে বৈঠক এবং সালামের মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটে।

সালাত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহায্যকারী এবং অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে নিষেধকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِ...﴾

(আর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো...) [আল-বাকারাহ : ৪৫], আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

﴿ٱتۡلُ مَآ أُوحِيَ إِلَيۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَٰبِ وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ...﴾

(আপনি তেলাওয়াত করুন কিতাব থেকে যা আপনার প্রতি ওহী করা হয় এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে...) [আল-আনকাবূত: ৪৫]।

সালাত মুমিনদের জন্য নূর, তাদের কবরে ও কিয়ামতের দিনে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«الصَّلَاةُ نُورٌ».

“সালাত হলো নূর”।27 তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

«مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا؛ كَانَتْ لَهُ نُورًا، وَبُرْهَانًا، وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ».

"যে কেউ সালাত সংরক্ষণ করবে; এটি কিয়ামতের দিন তার জন্য নূর, দলিল এবং মুক্তির কারণ হবে।"28

সালাত হলো মুমিনদের আনন্দ এবং তাদের চোখের প্রশান্তি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«جُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ».

"আমার চোখের প্রশান্তি সালাতের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।"29

সালাত পাপ মোচন করে এবং পাপের কাফফারা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ، يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ- وَسَخِهِ- شَيْءٌ ؟» قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ. قَالَ:«فَكَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا».

‘‘বলতো যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে? তারা বললেন: তার দেহে কোনোরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন”।30

তিনি আরো বলেছেন:

«الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ، كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ، مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ».

“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমুআহ থেকে অন্য জুমুআহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যায়, যদি সে কবীরা গুনাহতে লিপ্ত না হয়”।31

«‌وَصَلَاةُ الْجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَـَلاةِ الْفَـذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً».

“একাকী সালাত অপেক্ষা জামা‘আতের সালাত সাতাশ গুণ উত্তম”। ইবনু উমার হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।32

ইবনু মাস‘ঊদ রদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “যে ব্যক্তি আগামীকাল (কিয়ামতের দিন) মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐসব সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব সালাতের জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের পন্থা পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করেছেন। আর এসব সালাতও হিদায়াতের পন্থা পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। যেমন জনৈক ব্যক্তি সালাতের জামা’আতে উপস্থিত না হয়ে বাড়ীতে সালাত আদায় করে থাকে, অনুরূপ তোমরাও যদি তোমাদের বাড়ীতে সালাত আদায় করো তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পন্থা-পদ্ধতি পরিত্যাগ করলে। আর তোমরা যদি এভাবে তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পদ্ধতি পরিত্যাগ করো, তাহলে অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলবে। কেউ যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সালাত আদায় করার জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয়, তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং একটি করে পাপ মোচন করেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমরা মনে করি যার মুনাফিকী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামা’আতে সালাত আদায় করা ছেড়ে দেয় না। অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় এমন ব্যক্তিও জামা’আতে উপস্থিত হত, যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এসে সালাতের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত”।33

সালাতে বিনয় - হৃদয়ের উপস্থিতি - এবং তা বজায় রাখা সফলতা ও জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ 1 ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ 2 وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ 3 وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ 4 وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ 5 إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ 6 فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ 7 وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِأَمَٰنَٰتِهِمۡ وَعَهۡدِهِمۡ رَٰعُونَ 8 وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَوَٰتِهِمۡ يُحَافِظُونَ 9 أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡوَٰرِثُونَ 10 ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلۡفِرۡدَوۡسَ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ 11﴾

“অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে।*

যারা নিজেদের সালাতে বিনয়াবনত।*

আর যারা অনর্থক কথা-কর্ম থেকে বিমুখ।*

এবং যারা যাকাতে সক্রিয়।*

আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে রাখে সংরক্ষিত।*

নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত।*

অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারাই হবে সীমালংঘনকারী।*

আর যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী।*

আর যারা নিজেদের সালাতে থাকে যত্নবান।*

মূলত তারাই হলো উত্তরাধিকারী।*

তারা অধিকারী হবে ফিরদাউসের, সেখানে তারা হবে স্থায়ী।” [ আল-মু’মিনুন: ১-১১]

সালাত কবুলের দুটি মৌলিক শর্ত হলো: আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ইখলাস এবং সুন্নাহ অনুসারে তা পালন করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى».

“নিশ্চয়ই আমলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল রয়েছে।”34 তিনি আরও বলেছেন:

«صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي».

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ সেভাবে সালাত আদায় কর”।35

সালাতের পদ্ধতি:

যখন এই শর্তগুলি পূরণ করে সালাতের জন্য প্রস্তুত হল, তখন নিম্নের নিয়মে দাঁড়াবে:

১- কোন দিকে বাঁকানো বা তাকানো ব্যতীত সমস্ত শরীর নিয়ে কিবলামুখী হবে।

২- তারপর যে সালাত আদায় করতে ইচ্ছুক, অন্তরে তা আদায়ের নিয়ত করবে। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করবে না।

৩- তারপর "আল্লাহু আকবার" বলে তাকবীরে তাহরীমা দিবে এবং তাকবীর বলার সময় দুই হাত দুই কাঁধ অথবা দুই কানের লতি বা দুই কানের শাখার সমান করবে।

৪- তারপরে ডান হাতের তালু তার বাম হাতের কব্জির উপরে রেখে বুকের উপরে বাঁধবে।

৫- তারপরে ইস্তিফতাহ (সানা)এর দু‘আ পড়বে এবং বলবে:

«اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ».

উচ্চারণ:

“আল্লাহুম্মা বা-ইদ্ বাইনী ওয়া বাইনা খাতায়াইয়া, কামা বা-আদ্‌তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল-মাগরিব। আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতায়াইয়া, কামা ইউনাক্কাস সাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্ দানাস। আল্লাহুম্মাগ্‌সিলনী মিন খাতায়াইয়া বিল-মা-ই, ওয়াস্ সালজি, ওয়াল্ বারাদি।” অর্থ:

“হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দিন যেমন ব্যবধান করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ! আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দিন”।36

৬- অথবা বলবে:

«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ».

উচ্চারণ: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাস্‌মুকা, ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।” অর্থ: “হে আল্লাহ! প্রশংসা ও পবিত্রতা আপনারই, আপনার নাম বরকতময়, আপনি সম্মানিত, আপনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই”।37

৭- তারপর আউযুবিল্লাহ বলবে: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» "আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।"

৮- তারপরে বিসমিল্লাহ বলবে এবং সূরা ফাতিহা পাঠ করবে:

﴿بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ 1 ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ 2 ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ3 مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ 4 إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ 5 ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ 6 صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ 7﴾

“পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।*

সকল ‘হাম্‌দ’ আল্লাহ্‌র, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।*

দয়াময়, পরম দয়ালু।*

বিচার দিবসের মালিক।*

আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদাত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।*

আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন।*

তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন, যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।” তারপরে বলবে: “আমীন।” অর্থাৎ: হে আল্লাহ, আপনি কবুল করুন।

৯- তারপর কুরআনের যেখান থেকে সহজ, তা পাঠ করবে এবং ফজরের সালাতে কিরাআত দীর্ঘ করবে।

১০- তারপরে রুকু করবে, অর্থাৎ: আল্লাহ তা‘আলার সম্মানার্থে পিঠ ঝুকিয়ে দেবে, রুকুর সময়ে তাকবীর বলবে, আর তার দুই হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করবে। সুন্নাহ হচ্ছে: পিঠকে সোজা করে, মাথাকে পিঠের বরাবর রাখবে এবং আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে হাতদ্বয় দুই হাঁটুর উপরে রাখবে।

১১- আর রুকুতে তিনবার বলবে: «সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম» তথা: "আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করছি”। যদি আরো যোগ করে বলে:

«سُبْحَانَكَ الْلَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، الْلَّهُمَّ اغْفِرْ لِي».

উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী। "হে আমাদের রব আল্লাহ! তুমি ত্রুটিমুক্ত; প্রশংসা সবই তোমার। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও।"38

«سُبُّوحٌ، قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ».

উচ্চারণ: “সুব্বূহুন, কুদ্দূসুন, রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।” অর্থ: “তিনি পবিত্র, অতিপবিত্র, তিনি ফেরেশতাগণ ও রূহের (জিবরাঈল আঃ) প্রতিপালক।”39 তাহলে খুবই ভালো।

১২- তারপর রুকু থেকে মাথা তুলবে এবং বলবে: «সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ» "যে আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তার কথা শোনেন"। আর তার হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।

১৩- মুক্তাদিগণ সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ; বরং তার পরিবর্তে বলবে: «রব্বানা লাকাল হামদ» তথা: "হে আমাদের প্রতিপালক, প্রশংসা কেবল তোমারই।"

১৪- তারপর উঠার পর বলবে:

«رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، مِلْءَ السَّمَاوَاتِ، وَمِلْءَ الْأَرْضِ، وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ».

উচ্চারণ: “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, মিল’আস্-সামাওয়াতি, ওয়া মিল’আল আরদি, ওয়া মিল’আ মা বাইনাহুমা, ওয়া মিল’আ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা’দু।” অর্থ: "হে আমাদের রব! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্যই- যা আকাশ ভর্তি করে দেয়, যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয়, উভয়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে এবং এগুলো ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তাও পূর্ণ করে দেয়।”40

وإن زاد: «أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ، وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ: لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ» فحسن.

যদি আরো বৃদ্ধি করে বলে: উচ্চারণ: “আহলাস সানাঈ ওয়াল মাজদি, আহাক্ক মা কালাল আবদু, ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন; লা মানিয়া লিমা আ’তাইতা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, ওয়ালা ইয়ানফাউ যালাজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।” অর্থ: “হে রব! আপনি প্রশংসা ও মর্যাদার পূর্ণ হকদ্বার। বান্দা যা বলে, তার থেকেও বেশী। আমরা প্রত্যেকেই আপনার বান্দা। আপনি যা দান করেন তাকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই, আপনি যা প্রতিরোধ করেন, তা দেওয়ার মত কেউ নেই। আপনার থেকে (রক্ষা পাওয়ার জন্য) কারো প্রচেষ্টাই (সম্পদ) তার কোন উপকার করতে পারে না” তাহলে সেটা অনেক ভালো।41

১৫- তারপরে আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রদর্শন করে প্রথম সিজদা করবে এবং সিজদাতে (যাওয়ার সময়) বলবে: “আল্লাহু আকবার”। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করবে: কপালের সাথে নাক, হাতের তালুদ্বয়, হাঁটুদ্বয়, দুই পায়ের অগ্রভাগ। তার বাহুদ্বয় পার্শ্ব থেকে আলাদা রাখবে, স্বীয় বাহুকে যমীনের উপর বিছিয়ে রাখবে না এবং তার আঙ্গুলের মাথা কিবলামুখী করে রাখবে।

১৬- আর সিজদায় তিনবার বলবে: «সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা» তথা: আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করছি”। যদি আরো যোগ করে:

«سُبْحَانَكَ الْلَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، الْلَّهُمَّ اغْفِرْ لِي».

উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী। "হে আমাদের রব আল্লাহ! তুমি ত্রুটিমুক্ত; প্রশংসা সবই তোমার। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও।"42

«سُبُّوحٌ، قُدُّوسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ».

উচ্চারণ: “সুব্বূহুন, কুদ্দূসুন, রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।” অর্থ: “তিনি পবিত্র, অতিপবিত্র, তিনি ফেরেশতাগণ ও রূহের (জিবরাঈল আঃ) প্রতিপালক।”43 তাহলে খুবই ভালো।

১৭- তারপরে সিজদা থেকে “আল্লাহু আকবার” বলে মাথা ওঠাবে।

১৮- তারপরে দুই সিজদার মাঝখানে তার বাম পায়ের উপরে ভর করে বসবে, ডান পা খাড়া করে রাখবে। ডান হাতটি রাখবে ডান উরুর উপর, হাঁটুর কাছাকাছি অংশে। কনিষ্ট ও অনামিকা আঙ্গুলদ্বয় মুষ্টিবদ্ধ করে রাখবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল দু‘আ করার সময় নাড়াতে থাকবে, মধ্যমা আঙ্গুলের সাথে বৃদ্ধাঙ্গুলিকে বৃত্তের ন্যায় সংযুক্ত রাখবে এবং বাম হাত আঙুলগুলো প্রসারিত অবস্থায় বাম উরুর উপর, হাঁটুর কাছাকাছি অংশে রাখবে।

১৯- আর দুই সিজদার মাঝখানের বৈঠকে বলবে:

«رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي».

উচ্চারণ: “রব্বিগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওহদিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়াজবুরনী ও ‘আ-ফিনী”। অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহমত করুন, আমাকে হিদায়াত দিন, আমাকে রিযিক দিন, আমাকে বিপদমুক্ত করুন এবং আমাকে ক্ষমা করুন।”44

২০- তারপরে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়ে প্রথম সিজদাতে বলা দু‘আ ও কাজগুলির ন্যায় দ্বিতীয় সিজদাতেও তা করবে এবং সিজদা করার সময় তাকবীর বলবে।

২১- তারপরে “আল্লাহু আকবার” বলে দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে দাঁড়াবে এবং কথা ও কাজ ঠিক রেখে প্রথম রাকাতের ন্যায় দ্বিতীয় রাকাতও আদায় করবে, তবে ইস্তিফতাহের দু‘আ পড়বে না।

২২- দ্বিতীয় রাকাত শেষে “আল্লাহু আকবার” বলে বসবে আর দুই সিজদার মাঝখানে যেমন বৈঠক করেছিল, ঠিক অনুরূপ বৈঠক করবে।

২৩- এই বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করবে এবং বলবে: উচ্চারণ: "আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত্ তাইয়্যিবাতু আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন। আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।* আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। ওয়া বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।*আউযু বিল্লাহি মিন ‘আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ‘আযাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্‌ইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল।” অর্থ:

"মর্যাদাজ্ঞাপন-অভিবাদন আল্লাহর জন্য এবং ইবাদত-প্রার্থনা, পবিত্র কর্ম ও দানসমূহ (সবই আল্লাহর জন্য)। হে নবী, আপনার উপর সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকতসমূহ। সালাম আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেককার বান্দার উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো মা'বুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।* হে আল্লাহ! শান্তি বর্ষণ করুন, মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর, যেভাবে আপনি ইবরাহীম ও তার পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত। আর আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর, যেভাবে আপনি ইবরাহীম ও তার পরিবারবর্গের ওপর বরকত নাযিল করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও গৌরাবান্বিত।*আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।”

২৪- তারপর স্বীয় রবের কাছে নিজের পছন্দমতো দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানের জন্য কল্যাণকর দু‘আ করবে।

২৫- তারপরে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে ডানদিকে সালাম ফিরাবে এবং বামদিকেও অনুরূপ (সালাম) ফিরাবে।

২৬- যদি সালাত তিন অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম তাশাহহুদ পর্যন্ত সীমিত রাখবে, আর তা হলো:

أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله পর্যন্ত।

২৭- তারপরে “আল্লাহু আকবার” বলে উঠে দাঁড়াবে এবং ঐ সময়ে তার দুই হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করবে।

২৮- তারপর দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় বাকী রাকাতগুলো আদায় করবে, তবে শুধু সূরা ফাতিহাটুকু পড়বে।

২৯- তারপরে ডান পা খাড়া করে তাওয়াররুক পদ্ধতিতে বৈঠক করবে, অর্থাৎ নিতম্বের উপরে ভর করে বাম পা ডান পায়ের নিচ দিয়ে বের করে বসবে, তারপরে প্রথম তাশাহহুদে তার দুই হাত যেভাবে উরুর উপরে রেখেছিল, সেভাবে রাখবে।

৩০- এ বৈঠকে তাশাহহুদের দোয়া সবগুলো পড়বে।

৩১- তারপরে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে ডানদিকে সালাম ফিরাবে এবং বামদিকেও অনুরূপ (সালাম) ফিরাবে।

* সালাতের মাকরুহ বিষয়সমূহ:

১- সালাতে মাথা বা চোখ ঘুরিয়ে এদিক-সেদিক তাকানো মাকরুহ। আর আকাশের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হারাম।

২- সালাতের সময় বিনা প্রয়োজনে অনর্থক কাজ বা নড়াচড়া করা মাকরুহ।

৩- সালাতে এমন কিছু বহন করা মাকরুহ যা মনোযোগ বিঘ্নিত করে, যেমন ভারী কিছু বা রঙিন কিছু যা মনোযোগ আকর্ষণ করে।

৪- সালাতে কোমরের উপর হাত রাখা মাকরুহ।

* যেসব জিনিস সালাত বাতিল করে:

১- ইচ্ছাকৃত কথাবার্তা সালাত বাতিল করে দেয়, যদিও তা অল্প পরিমাণে হয়।

২- পুরো শরীর কিবলা থেকে সরে গেলে সালাত বাতিল হয়ে যায়।

৩- মলদ্বার থেকে বায়ু বের হলে এবং অযু বা গোসল ওয়াজিব করে এমন কাজের কারণে সালাত বাতিল হয়ে যায়।

৪- প্রয়োজন ছাড়া পরপর বেশী পরিমাণে নড়াচড়া করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়।

৫- হাসাহাসি সালাতকে নষ্ট করে দেয়, যদিও তা সামান্য হয়।

৬- যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রুকু, সিজদা, দাঁড়ানো বা বৈঠক বৃদ্ধি করে, তাহলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।

৭- ইচ্ছাকৃতভাবে ইমামের আগে কিছু করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়।

৮- আরেকটি বিষয় যা সালাত বাতিল করে তা হল: এমন পাতলা পোশাক পরে সালাত পড়া যা শরীরের চামড়া প্রকাশ করে (যেমনটি নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে):

সম্মানিত শায়খ/ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমিন।

আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। দয়া করে এই প্রশ্নের উত্তর দিন:

অনেকেই পাতলা পোশাক পরে সালাত পড়েন যা থেকে ত্বক দেখা যায় এবং এই পোশাকের নীচে তারা এমন ছোট প্যান্ট পরেন যা উরুর মাঝখান থেকে নীচে নামে না, ফলে পোশাকের পিছন থেকে উরুর মাঝখানটি দেখা যায়। এই লোকদের সালাতের হুকুম কী?

ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ

এই লোকদের সালাতের হুকুম সেই ব্যক্তির হুকুমের মতোই, যে হাফপ্যান্ট ছাড়া অন্য কোন পোশাক না পরেই সালাত পড়ল। কারণ স্বচ্ছ পোশাক যা ত্বককে প্রকাশ করে দেয়, তা আচ্ছাদনকারী নয় এবং এর উপস্থিতি তার অনুপস্থিতির মতো। এর ভিত্তিতে, আলেমদের দুটি মতামতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিক মতানুসারে তাদের সালাত বৈধ নয়, যা ইমাম আহমাদের মাযহাবের সুপরিচিত মতামত - আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন -। কারণ সালাতরত ব্যক্তির নাভি এবং হাঁটুর মধ্যবর্তী অংশ ঢেকে রাখা ওয়াজিব এবং আল্লাহর নিম্নের বাণী মেনে চলার জন্য এটিই সর্বনিম্ন সীমা:45

﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ...﴾

“হে আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক সালাতে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান করো...” [আল-আরাফ: ৩১]।

অতএব, তাদের উপর দুটি জিনিসের মধ্যে একটি করা ওয়াজিব: হয় নাভি এবং হাঁটুর মধ্যবর্তী অংশ ঢেকে রাখে এমন শর্ট পায়জামা পরবে, অথবা এই শর্ট পায়জামার উপর এমন একটি মোটা পোশাক পরবে যা ত্বক প্রকাশ করে না।

প্রশ্নে উল্লেখিত এই কাজটি ভুল এবং বিপজ্জনক। তাদের অবশ্যই আল্লাহর কাছে এর জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং তাদের সালাতে যা ঢেকে রাখা উচিত, তা ঢেকে রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের ও আমাদের মুসলিম ভাইদের পথ দেখান এবং তিনি যা পছন্দ করেন ও যাতে সন্তুষ্ট হন, তা পালন করার তাওফিক দান করেন! নিশ্চয় তিনি উদার, সম্মানিত।

লিখেছেন:

মুহাম্মাদ সালিহ আল-উসাইমীন

৫ রমাদান, ১৪০৮হি.

ফরয সালাতের সালাম শেষে পাঠ্য যিকিরসমূহ

সালাম শেষে বলা উচিত:

«أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ».

“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী”।46

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاَللَّهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ، وَلَهُ الْفَضْلُ، وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ».

উচ্চারণ:

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা নাআবুদু ইল্লা ইইয়্যাহ। লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফাদলু ওয়ালাহুস সানা’উল হাসান। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন।” অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁরই, আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি ও সামর্থ্য নেই। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, আমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করি। সব অনুগ্রহ, শ্রেষ্ঠত্ব ও সুন্দর প্রশংসা তাঁরই জন্য। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, আমরা তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।”47

«لَا إلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ».

উচ্চারণ:

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, ওয়া লা ইয়ানফাউ যাল-জাদ্দি মিনকাল-জাদ্দু।” অর্থ:

“আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। সমস্ত রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁরই, এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করেন, তা কেউ রোধ করতে পারে না, আর আপনি যা রোধ করেন, তা কেউ প্রদান করতে পারে না। আর কোনো ক্ষমতাবান ব্যক্তির ক্ষমতা আপনার কাছে কোনো কাজে আসে না।”48

এ ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পড়ার চেষ্টা করবে, যা বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যে বর্ণিত হয়েছে। উত্তম হলো একবার এটি, আরেকবার অন্যটি বলা।

প্রথম: «সুবহানাল্লাহ» ৩৩বার বলা, «আলহামদুলিল্লাহ» ৩৩বার বলা এবং «আল্লাহু আকবার» ৩৩বার বলা এবং শেষে বলা:

«لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».

“আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।”49

দ্বিতীয়: «সুবহানাল্লাহ» ৩৩বার বলা, «আল-হামদুলিল্লাহ» ৩৩বার বলা এবং «আল্লাহু আকবার» ৩৪বার বলা।50

তৃতীয়: «সুবহানাল্লাহ» ১০বার বলা, «আল-হামদুল্লিাহ» ১০বার বলা এবং «আল্লাহু আকবার» ১০বার বলা।51

চতুর্থ: «সুবহানাল্লাহ, ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়ালা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার» ২৫বার বলা।52

আরো পড়বে আয়াতুল কুরসী এবং পড়বে:

﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ 1﴾

সূরা আল-ইখলাস, এবং

﴿ قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ 1﴾

সূরা আল-ফালাক, এবং

﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ 1﴾

সূরা আন-নাস।

সাহু সাজদার বিধানসমূহ

সাহু সাজদার তিনটি কারণ রয়েছে: বৃদ্ধি করা, হ্রাস করা এবং সন্দেহ।

বৃদ্ধি করা:

যেমন: একজন মুসল্লি সালাতে একটি রুকু বৃদ্ধি করে এক রাকাতে দু’টি রুকু করল, অথবা একটি সাজদা বৃদ্ধি করে এক রাকাতে তিনটি সাজদা করল, অথবা একটি কিয়াম বৃদ্ধি করে পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেল -উদাহরণস্বরূপ- চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতে, তারপর তার স্মরণে আসলে সে ফিরে আসলো।

যদি সাহুর সাজদা এই কারণে হয়, তাহলে তা হবে সালামের পরে, অর্থাৎ: তুমি তাশাহহুদ পাঠ করবে, সালাম ফিরাবে। তারপর দু’টি সাজদা করবে এবং পুনরায় সালাম ফিরাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ রাকাত সালাত পড়ার সময় এটাই করেছেন। সাহাবীগণ সালামের পর তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ফলে তিনি সালামের পর সাজদা করেছেন।53

এটা বলা যাবে না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে সালামের পর সাজদা করেছিলেন, কারণ এটা অপরিহার্য ছিল; কেননা তিনি সালামের পর ছাড়া জানতে পারেননি এবং এটাই সত্য। তবে, আমরা বলি যে, যদি তার আমলের থেকে বিধান ভিন্ন হতো, তাহলে তিনি তাদেরকে বলতেন: যদি তোমরা সালাম ফেরানোর আগে বৃদ্ধি করা সম্পর্কে জানতে পার, তাহলে সালামের আগে সাজদা করো। যখন তিনি বিষয়টি যথারীতি নিশ্চিত করলেন, তখন জানা গেল যে, বৃদ্ধিজনিত ভুলের সাজদা সালামের পরে হওয়া উচিত।

এর দলিল এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দুপুর বা আসরের দুই রাকাত সালাত শেষ করলেন। তারপর সাহাবীগণ তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, তখন তিনি তার সালাত পূর্ণ করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর দু’টি সাজদা করলেন, তারপর আবার সালাম ফিরালেন। কারণ সালাত আদায়কালে সালাম একটি বৃদ্ধি, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের পরে এর জন্য সাজদা করলেন।54

হাদীসের আলোকে যেমন এটি আবশ্যক, তেমনি যুক্তির আলোকেও আবশ্যক। কারণ যদি সে সালাতে বৃদ্ধি করে আর আমরা বলি: তিনি সালাম দেওয়ার আগে সাহু সাজদা করবেন; তাহলে সালাতে দুটি বৃদ্ধি ঘটল। যদি আমরা বলি: তিনি সালামের পরে সাজদা করবেন, তাহলে একটি বৃদ্ধি ঘটল যা ভুলবশত করা হয়েছিল।

হ্রাস করা:

এর কারণে সাজদা হবে সালামের পূর্বে, যেমন: যদি তিনি ভুলে প্রথম তাশাহুদ থেকে উঠে দাঁড়ান, অথবা সাজদায় «সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা» বলতে ভুলে যান, অথবা যদি সে রুকুতে «সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম» বলতে ভুলে যান, তাহলে তিনি সালাম দেওয়ার আগে সাজদা করবেন; যেহেতু এই ওয়াজিবটি বাদ দেওয়ার কারণে সালাত অসম্পূর্ণ ছিল, তাই সালাম দেওয়ার আগে ভুলে যাওয়ার জন্য সাজদা করাই ছিল যুক্তির দাবি, যাতে সালাত ত্যাগ করার আগে তার ত্রুটি পূরণ করা যায়।

আবদুল্লাহ ইবনু বুহাইনার হাদীস এর প্রমাণ বহন করে:

«‌أنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى بِهِمُ الظُّهْرَ، فَقَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ وَلَمْ يَجْلِسْ، فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ، وَانْتَظَرَ النَّاسُ تَسْلِيمَهُ، كَبَّرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ جَالِسٌ، فَسَجَدَ سَجْدَتَيْنِ، ثُمَّ سَلَّمَ».

“একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে যুহরের সালাত আদায় করলেন। তিনি প্রথমে দু’ রাকাআত পড়ার পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুক্তাদীগণ সালামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসাবস্থায় তাকবীর বললেন এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’বার সিজদা করলেন, এরপর সালাম ফিরালেন”।55

বৃদ্ধি বা ঘাটতি (হ্রাস) সম্পর্কে সন্দেহ:

যদি তার সন্দেহ হয়: সে কি চার রাকাত পড়েছে, নাকি তিন রাকাত? এর দুটি অবস্থা রয়েছে:

প্রথম অবস্থা: দু‘টি জিনিসের মধ্যে একটির প্রতি তার ধারনা প্রবল হয়, হতে পারে তা বৃদ্ধি অথবা হ্রাস। এতে তিনি তার প্রবল ধাণার উপর ভিত্তি করবেন এবং সালামের পর ভুলে যাওয়ার সাজদা করবেন, যেমন ইবনু মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীসে আছে:

«إِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ، فَلْيَتَحَرَّ الصَّوَابَ فَلْيُتِمَّ عَلَيْهِ، ثُمَّ لِيُسَلِّمْ، ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ».

“তোমাদের কেউ সালাত সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূর্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টি সাজদা দেয় “ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনি বলেছেন, অথবা এর অনুরূপ কিছু।56

দ্বিতীয় অবস্থা: যদি সে সন্দেহ করে যে, দুটি বিষয়ের কোন একটির ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে কিছু বৃদ্ধি করেছে বা বাদ দিয়েছে, তাহলে তার উচিত যা নিশ্চিত - যা কম - তার উপর ভিত্তি করে সালাত সম্পন্ন করা, তারপর সালাম দেওয়ার আগে দুটি সাজদা করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে সুন্নাহ এভাবেই এসেছে।57

* সাহু সাজদার বিধানসমূহ:

১- যদি কোন মুসল্লী সালাত শেষ করার আগে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাম ফিরায়; তার সালাত বাতিল।

২- যদি মুসল্লী ইচ্ছাকৃতভাবে সালাতের কিয়াম (দাঁড়ানো), বসা, রুকু বা সাজদা বৃদ্ধি করে, তাহলে তার সালাত বাতিল হবে।

৩- যদি সে সালাতের কোন একটি রোকন, যেমন তাকবীরে তাহরীমা বাদ দেয়; তার সালাত হবে না, সে ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিক অথবা ভুলক্রমে। কারণ তার সালাতই শুরু হয়নি। এমনকি যদি বাদ দেওয়া রোকনটি ইহরামের তাকবীর নাও হয়, তবু ইচ্ছাকৃতভাবে তা বাদ দেওয়ার ফলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে।

৪- যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাতের কোন ওয়াজিব ত্যাগ করে; তার সালাত বাতিল হবে।

৫- যদি সাহু সাজদা সালামের পরে হয়; তাহলে সালাত সমাপ্ত করার জন্য দ্বিতীয় বার সালাম ফিরানো জরুরী।

* সাহু সাজদার বিধানসমূহের সারসংক্ষেপ:

মাসআলা: ১- সালাত পূর্ণ করার আগে সালাম ফেরানোর ক্ষেত্রে:

যখন মুসল্লি সালাত শেষ করার আগে ভুলে সালাম ফেরাল।

এর অবস্থা: যদি দীর্ঘ সময় পরে স্মরণ করে; তাহলে নতুন করে সালাত আদায় করবে।

আর যদি অল্প সময় পরে মনে পড়ে -যেমন পাঁচ মিনিট- তাহলে তার সালাত সম্পন্ন করবে এবং সালাম ফেরাবে।

সাজদার স্থান: সালামের পর ভুলে যাওয়ার জন্য দু’টি সাজদা করবে এবং তারপর দ্বিতীয়বার সালাম ফেরাবে।

***

মাসআলা: ২- সালাতে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে:

২- যখন মুসল্লী সালাতের মধ্যে কিয়াম (দাঁড়ানো), বসা, রুকু বা সাজদা বৃদ্ধি করে ফেলে।

তার অবস্থা: যদি সে বৃদ্ধি করে ফেলার পর স্মরণ করে, তাহলে তার উপর সাহু সাজদা করা ছাড়া কিছু করার নেই।

আর যদি বৃদ্ধির মধ্যেই স্মরণ হয়; তাহলে তার জন্য বৃদ্ধি থেকে ফিরে আসা ওয়াজিব।

সাজদার স্থান: সালামের পর সাহু সাজদা করবে এবং দ্বিতীয়বার সালাম ফেরাবে।

***

মাসআলা: ৩- রোকন ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে: যদি সালাতের তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোন রোকন ভুলে ছুটে যায়,

তার অবস্থা: যদি সে পরবর্তী রাকাতের একই স্থানে পৌঁছে যায়; তাহলে রোকন ছেড়ে দেওয়া রাকাতটি বাতিল হবে এবং পরবর্তী রাকাতটি তার স্থলে চলে যাবে।

যদি সে পরবর্তী রাকাতের সেই স্থানে না পৌঁছায়; তাহলে তাকে সেই স্থানে ফিরে যাওয়া ওয়াজিব যেখানে রোকনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তখন সেই রোকন ও তার পরের কর্ম সম্পাদন করবে। সাজদার স্থান: উভয় ক্ষেত্রেই তাকে ভুলের সাজদা করা ওয়াজিব এবং এর স্থান হবে সালামের পরে।

***

মাসআলা: ৪ - সালাতে সন্দেহের ক্ষেত্রে:

যখন রাকাতের সংখ্যা সম্পর্কে সন্দেহ হয়: সে কি দুই রাকাত সালাত পড়েছে, নাকি তিন? এর দুটি অবস্থা:

তার প্রথম অবস্থা: দু’টি বিষয়ের মধ্যে একটি তার কাছে প্রাধান্য পাবে; তখন প্রাধান্যপ্রাপ্তের উপর আমল করবে এবং তার উপর ভিত্তি করে সালাত সম্পন্ন করবে। তারপর সালাম ফেরাবে।

দ্বিতীয় অবস্থা: দু’টি বিষয় থেকে একটিও তার কাছে প্রধান্যপ্রাপ্ত হবে না; তখন সে নিশ্চিতের উপর ভিত্তি করবে, সেটা হল কম সংখ্যা এবং তার উপর ভিত্তি করে সালাত সম্পন্ন করবে।

সাজদার স্থান: প্রথম অবস্থায় সালামের পর সাহু সাজদা করবে।

দ্বিতীয় অবস্থায় সালামের আগে সাহু সাজদা করবে।

***

মাসআলা: ৫- ভুলবশত প্রথম তাশাহহুদ ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে:

ওয়াজিব বিষয়ের হুকুমের মতোই প্রথম তাশাহহুদের হুকুম।

তার অবস্থা: যদি সোজা দাঁড়ানোর পর ছাড়া স্মরণ না হয়; তাহলে সালাত চালিয়ে যাবে এবং তাশাহহুদের জন্য ফিরে আসবে না।

যদি সে ওঠার পর এবং সোজা দাঁড়ানোর আগে স্মরণ করে; তাহলে ফিরে আসবে এবং বসবে, তাশাহহুদ পাঠ করবে এবং তার সালাত পূর্ণ করবে।

যদি তার পায়ের গোছা থেকে উরু তুলে ফেলার আগে স্মরণ হয়; তাহলে সে স্থির হয়ে বসবে, তাশাহহুদ পাঠ করবে, তারপর সালাত সম্পন্ন করবে এবং সাহু সাজদা করবে না। কারণ তার থেকে বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটেনি।

সাজদার স্থান: সালামের পূর্বে সাহু সাজদা করবে।

তিলাওয়াতের সাজদা

এর কারণ: একজন ব্যক্তি এমন একটি আয়াত অতিক্রম করে যেখানে সাজদা আছে। আর আল-কুরআনুল কারীমের সাজদাগুলি পরিচিত এবং কুরআনের প্রান্তে সেগুলো চিহ্নিত করা আছে। তাই যদি কেউ সাজদার আয়াত অতিক্রম করে; তখন তার উপর হক হয়ে যায় যে, সে আল্লাহর জন্য একটি সাজদা করবে। বরং, কিছু আলিম বলেছেন যে তিলাওয়াতের সাজদা ওয়াজিব। সঠিক মত হল: এটি ওয়াজিব নয়। কারণ আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু একদিন জুমার খুতবা দিলেন এবং সূরা নাহলের সাজদার আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন ও সাজদা করলেন। তারপর তিনি অন্য জুমাবারে এটি পাঠ করলেন, কিন্তু সাজদা করলেন না। তারপর তিনি বললেন: "আল্লাহ আমাদের উপর সাজদা ওয়াজিব করেননি, তবে আমরা চাইলে করতে পারি।"।58 এখানে ইস্তিসনা মুনকাতি, অর্থাৎ তাঁর «إلَّا أن نشاء» কথার অর্থ: "আমরা ইচ্ছা করলে সাজদা করব। «إلَّا أن نشاء» এর অর্থ এই নয় যে, আমরা চাইলে তিনি এটি আমাদের উপর ফরজ করে দিবেন। কারণ চাওয়ার সাথে ফরযের সম্পর্ক নেই। আর উমার রদিয়াল্লাহু আনহু এটি সাহাবাদের উপস্থিতিতে করেছেন, কেউ তাকে তিরষ্কার করেননি, অথচ খারাপকে খারাপ বলতে সাহাবীগণ আগ্রহী ছিলেন। সুতরাং, এই মহান সমাবেশে সাহাবীদের সমর্থন সঠিক পথে পরিচালিত খলিফা উমার ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু-এর জারি করা কর্মের প্রতি ইঙ্গিত দেয় যে, তিলাওয়াতের সাজদা ওয়াজিব নয় এবং এটিই সঠিক, ব্যক্তি সালাতে থাকুক বা না থাকুক।

* তিলাওয়াতে সাজদার বিবরণ:

ব্যক্তি আল্লাহু আকবার বলবেন, সাজদা করবেন - সালাতের সাজদার ন্যায় - সাতটি অঙ্গের উপর এবং বলবেন:

«سُبْحَانَكَ الْلَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، الْلَّهُمَّ اغْفِرْ لِي»" এবং তিনি প্রসিদ্ধ দু‘আটি পাঠ করবেন:

«اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، سَجَدَ وَجْهِي لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ، اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا أَجْرًا، وَارْفَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ».

উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া 'আলাইকা তাওয়াক্কালতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লা-হিল্লাজী খালাকাহু ওয়া সাওওয়ারাহু, ওয়া শাক্কা সাম'আহু ওয়া বাসারাহু বিহাওলিহি ওয়া কুওওয়াতিহি। আল্লাহুম্মাক্তুব লী বিহা আজরান, ওয়ারফা' 'আন্নী বিহা ওইজরান, ওয়াজ'আলহা লী 'ইন্দাকা যুখরান, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নী কামা তাকাব্বালতাহা মিন 'আবদিকা দাউদ।” অর্থ:

হে আল্লাহ! আপনারই উদ্দেশ্যে আমি সাজদা করলাম। আপনারই প্রতি আমি ঈমান আনলাম। আপনার উপরেই ভরসা করেছি। আমার মুখমণ্ডল সে মহান সত্তার উদ্দেশ্যে সাজদা করল যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দান করেছেন আর নিজ শক্তি ও ক্ষমতায় কান ও চোখ ফুটিয়ে শ্রবণ ও দর্শনের উপযোগী করে তৈরি করেছেন। "হে আল্লাহ, এর বিনিময়ে আমার জন্য একটি নেকি লিখুন, এর বিনিময়ে আমার উপর থেকে একটি বোঝা সরিয়ে দিন, এটিকে আপনার কাছে আমার জন্য সঞ্চয় করুন এবং এটি আমার কাছ থেকে কবুল করুন যেমন আপনি আপনার বান্দা দাউদের কাছ থেকে কবুল করেছেন।"59 তারপর তাকবীর ও সালাম ফেরানো ছাড়াই ওঠে পড়বে।

যদি সে সালাতের মাঝে সাজদা করে, তখন সাজদা করার সময় "আল্লাহু আকবার" বলবে এবং যখন সে উঠবে তখনও "আল্লাহু আকবার" বলবে। কারণ যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বর্ণনা করছেন, তারা সকলেই তার তাকবীরের ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন যে তিনি প্রতিবার মাথা তোলার সময় এবং প্রতিবার মাথা নিচু করার সময় তাকবীর বলতেন।60 কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে তেলাওয়াতের সময় সাজদা করতেন, যেমনটি আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি এশার সালাতে তিলাওয়াত করলেন:

﴿إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنشَقَّتۡ 1﴾

(যখন আসমান বিদীর্ণ হবে) এবং তাতে সাজদা করলেন।61

যারা তাকবীরের বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বর্ণনা দিয়েছেন, তারা এর থেকে তেলাওয়াতের সাজদা বাদ দেননি। এ থেকে বোঝা যায় যে, সালাতে তেলাওয়াতের সাজদা হলো সালাতের মূল অংশের সাজদার মতো, যেখানে সে সাজদা করার সময় এবং ওঠার সময় তাকবীর বলবে।

আর যে সাজদার আয়াতটি পাঠ করছে তার সাজদা শেষে থাকুক অথবা তেলাওয়াতের মধ্যে থাকুক, তাতে কোন পার্থক্য নেই। সে সাজদা করার সময় "আল্লাহু আকবার" বলবে এবং যখন উঠে দাঁড়াবে "আল্লাহু আকবার" বলবে, তারপর রুকু করার সময় "আল্লাহু আকবার" বলবে এবং দুটি তাকবীর পরপর বললে কোন সমস্যা নেই; যেহেতু তাদের কারণ ভিন্ন।

কিছু লোক যখন সালাতের সময় সাজদার আয়াত পড়ে সাজদা করে, তখন তারা সাজদা করার জন্য "আল্লাহু আকবার" বলে, কিন্তু তার থেকে উঠার সময় তাকবীর বলে না। এর কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। তেলাওয়াতের সাজদা থেকে ওঠার সময় "আল্লাহু আকবার" বলার বিষয়ে যে মতবিরোধ বর্ণিত হয়েছে তা কেবল সালাতের বাইরে সাজদার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে, যদি সালাতের সময় সাজদা করা হয়, তাহলে এটিকে সালাতের মধ্যকার সাজদা হিসেবে গণ্য করা হবে, অর্থাৎ সে সাজদা করার সময় "আল্লাহু আকবার" বলবে এবং সাজদা থেকে উঠার সময়ও "আল্লাহু আকবার" বলবে।

মুসাফিরের সালাত ও সিয়াম

মুসাফিরের সালাত তার শহর ত্যাগ করার পর থেকে দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত দুই রাকাত। কারণ আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: "প্রথমে দুই রাকাত সালাত ফরয করা হয়েছিল, তারপর সফরের সালাত দুই রাকাত-ই রাখা হয়েছে এবং মুকিমের সালাত সম্পন্ন করা হয়েছে।"62 অন্য বর্ণনায় এসেছে: “আর মুকিমের সালাতে বৃদ্ধি করা হয়েছে।”63

আনাস ইবনু মালিক রদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলাম এবং তিনি মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দুই রাক‘আত, দুই রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন”।64

কিন্তু যদি সে এমন ইমামের সাথে সালাত পড়ে যে চার রাকাত পূর্ণ পড়বে, তাহলে সে চার রাকাত পূর্ণ করবে, শুরু থেকে সালাতে অংশ গ্রহণ করুক বা তার কিছু অংশ বাদ পড়ুক। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِذَا سَمِعْتُمْ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ، وَعَلَيْكُمْ السَّكِينَةُ وَالْوَقَارُ، وَلَا تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا».

‘‘যখন ইক্বামাত শোন তখন তোমরা সালাতে হেঁটে আসবে এ অবস্থায় যে, তোমাদের ধীরতা ও গাম্ভীর্যতা বজায় থাকে। আর দৌড়ে আসবে না। তারপর যতটা সালাত পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটা ছুটে যাবে, ততটা (নিজে) পূরণ করে নেবে”।,65 তার বাণী «مَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِـمُّوا» “যতটা সালাত পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটা ছুটে যাবে, ততটা (নিজে) পূরণ করে নেবে” এর ব্যাপকতা চার রাকাত পড়ুয়া ইমাম ও অন্যান্য ইমামকে শামিল করে। ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কেন মুসাফির একাকী পড়লে দু’রাকাত পড়বে আর মুকিমের পিছনে পড়লে চার রাকাত পড়বে? তিনি উত্তরে বললেন: “এটাই সুন্নাহ”।66

আর মুসাফিরের জন্য জামাতে সালাত আদায়ের হুকুম রহিত হয় না; কারণ আল্লাহ তাআলা যুদ্ধের অবস্থাতেও এটা আদেশ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন:

﴿وَإِذَا كُنتَ فِيهِمۡ فَأَقَمۡتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَةٞ مِّنۡهُم مَّعَكَ وَلۡيَأۡخُذُوٓاْ أَسۡلِحَتَهُمۡۖ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلۡيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمۡ وَلۡتَأۡتِ طَآئِفَةٌ أُخۡرَىٰ لَمۡ يُصَلُّواْ فَلۡيُصَلُّواْ مَعَكَ...﴾

(আর আপনি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবেন তারপর তাদের সাথে সালাত কায়েম করবেন, তখন তাদের একদল আপনার সাথে যেন দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তারা সাজদা করলে এরা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয়নি তারা আপনার সাথে যেন সালাতে শরীক হয়...) [আন-নিসা: ১০২] পূর্ণ আয়াত।

অতএব, যদি মুসাফির তার নিজের দেশ ছাড়া অন্য কোন দেশে অবস্থান করে; যদি সে দূরে না থাকে অথবা তার সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা না করে, তাহলে তাকে আযান শুনতে পেলে মসজিদে জামাতে সালাত পড়তে হবে। কারণ সাধারণ দলিল থেকে জানা যায় যে, কেউ আযান বা ইকামাত শুনতে পেলে, তার জন্য জামাতে সালাত পড়া ওয়াজিব।

আর নফল সালাতের ক্ষেত্রে: মুসাফির যোহর, মাগরিব এবং এশার সুন্নাত সালাত ব্যতীত সকল নফল সালাত আদায় করবে। তিনি বিতর, রাতের সালাত, যোহার সালাত, ফজরের সুন্নাত সালাতসহ অন্যান্য নফল সালাত আদায় করবেন, তবে অব্যাহতি দেওয়া সুন্নাতে রাতেবা ব্যতীত।

আর জমা করার বিষয়টি: যদি সে সফরে চলন্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে তার জন্য উত্তম হলো যোহর ও আসরের সালাত এবং মাগরিব ও এশার সালাত একসাথে আদায় করা, হয় জমা তাকদীম করবে অথবা জমা তাখীর করবে, তার জন্য যা সহজ হবে সেই অনুযায়ী। যখন এরূপ করলে সহজ হবে তখনই এরূপ করবে। আর যদি সে অবস্থান করে, তাহলে দুই সালাত একত্রিত না করাই ভালো, যদি সে তা একত্রিত করে, তাহলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ উভয় বিষয় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে প্রমাণিত।

অপরদিকে রমাদ্বান মাসে মুসাফিরের সিয়াম রাখার বিষয়টি হলো: সিয়াম রাখা উত্তম, যদি সে সিয়াম ভাঙে, কোন সমস্যা নেই। সে যতদিন সিয়াম ভাঙবে, ততদিন তার কাযা করবে, তবে যদি সিয়াম ভাঙা তার জন্য সহজ হয়, তাহলে সিয়াম ভাঙাই উত্তম। কারণ আল্লাহ পছন্দ করেন যে তাঁর প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো কাজে লাগানো হোক, আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

লিখেছেন: মুহাম্মাদ ইবনু সালেহ আল-উসাইমীন

তারিখ ০৫/১২/১৪০৯হি.

বিমানে ভ্রমণকারী ব্যক্তি কীভাবে সালাত আদায় করবে?

১- বিমানের আসনে বসে নফল সালাত আদায় করবেন, বিমানের দিক যে দিকেই থাকুক এবং রুকু ও সাজদার জন্য ইশারা করবেন তবে সাজদার জন্য একটু বেশী নিচু হবেন।

২- বিমানে ফরজ সালাত আদায় করবে না, তবে যদি পুরো সালাত জুড়ে কেবলামুখী থাকতে পারে এবং রুকু, সাজদা, দাঁড়ানো এবং বসতে সক্ষম হয়, তাহলে আদায় করতে পারবে।

৩- যদি সে তা করতে অক্ষম হয়; সালাত বিলম্বিত করবে যতক্ষণ না বিমান অবতরণ করে, তারপর মাটিতে সালাত পড়বে। যদি সে আশঙ্কা করে যে অবতরণের আগে সময় শেষ হয়ে যাবে, তাহলে সে দ্বিতীয় ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করবে, যদি এটি এমন কোন সালাতের সময় হয় যা একসাথে পড়া সম্ভব, যেমন যোহরের সাথে আসর এবং মাগরিবের সাথে এশা। যদি সে আশঙ্কা করে যে, দ্বিতীয় সালাতের সময়ও শেষ হয়ে যাবে, তাহলে সে সময় শেষ হওয়ার আগেই বিমানে সালাত আদায় করবে এবং সালাতের শর্ত, রুকন এবং ফরজগুলি যথাসাধ্য পালন করবে।

(উদাহরণস্বরূপ) যদি বিমানটি সূর্যাস্তের ঠিক আগে উড্ডয়ন করে এবং সে যখন আকাশে ছিল তখন সূর্য অস্ত যায়; তিনি বিমানবন্দরে অবতরণ না করা পর্যন্ত মাগরিবের সালাত পড়বেন না, তারপর নেমে মাটিতে সালাত পড়বেন। যদি তিনি আশঙ্কা করেন যে মাগরিবের সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাবে, তাহলে তিনি এশার সময় পর্যন্ত তা বিলম্ব করবেন, অবতরণ করার পর উভয় সালাত একত্রিত করবেন। যদি তার আশঙ্কা হয় যে, এশার সালাতের সময় শেষ হয়ে যাবে - অর্থাৎ মধ্যরাত হয়ে যাবে - তাহলে বিমানে সময় শেষ হওয়ার আগেই সালাত আদায় করবেন।

৪- বিমানে ফরজ সালাত আদায় করার নিয়ম: দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হবে, তাকবীর বলবে, সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং তার আগে ইস্তিফতাহের দু‘আ এবং পরে কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করা সুন্নাত। তারপর রুকু করবে, রুকু থেকে উঠবে এবং দাঁড়িয়ে স্থির হবে। তারপর সাজদা করবে, সাজদা থেকে উঠবে এবং বসে স্থির হবে তারপর দ্বিতীয় সাজদা করবে। তারপর সে তার বাকি সালাতের জন্যও একই কাজ করবে।

যদি সে সাজদা করতে অক্ষম হয়, তাহলে বসবে এবং বসেই সাজদার জন্য ইশারা করবে। যদি সে কিবলার দিক না জানে এবং তার বিশ্বাসযোগ্য কেউ তাকে বলতে না পারে, তাহলে তার উচিত চেষ্টা করা, অনুসন্ধান করা এবং তার গবেষণা অনুযায়ী সালাত পড়া।

৫- বিমানে ভ্রমণকারীর সালাত কসর হবে, তাই তিনি চার রাকাত সালাত দুই রাকাত করে আদায় করবেন; অন্যান্য ভ্রমণকারীর মতো।

বিমানে ভ্রমণকারী ব্যক্তি হজ্জ ও ওমরার জন্য কীভাবে ইহরাম বাঁধবেন?

১- সে তার বাড়ীতে গোসল করবে এবং তার স্বাভাবিক পোশাক পরে থাকবে এবং যদি সে ইচ্ছা করে, তাহলে ইহরামের পোশাকও পরতে পারবে।

২- যখন বিমানটি মিকাতের কাছাকাছি হবে; তখন ইহরামের পোশাক আগে না পরে থাকলে তা পরে নিবেন।

৩- যখন বিমানটি মিকাতের বরাবর হবে; তখন হজ বা ওমরায় প্রবেশ করার নিয়ত করবেন এবং তিনি তার নিয়ত মাফিক হজ্জ বা ওমরার তালবিয়া পাঠ করবেন।

৪- যদি সে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অবহেলা বা ভুলে যাওয়ার ভয়ে, মিকাতের বরাবর হওয়ার আগে ইহরাম বাঁধে; তাতে সমস্যা নেই।

লিখেছেন মুহাম্মদ সালিহ আল-উসাইমীন

তারিখ ০২/০৫/১৪০৯হি. সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই প্ৰাপ্য।

অসুস্থতা এবং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

অসুস্থতা: শরীর খারাপ হওয়া এবং শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য থেকে বিচ্যুতি ঘটা।

রোগীর নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পালন করা উচিত:

১- বিশ্বাস করা যে তাকে যা স্পর্শ করেছে তা আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাকদীরের কারণে। কারণ তার রব মহান, তিনিই এটি নির্ধারণ করেছেন এবং তিনিই এর স্রষ্টা, মালিক, তাই রোগী আশ্বস্ত ও সন্তুষ্ট হবেন এবং আত্মসমর্পণ করবেন।

২- বিশ্বাস করা যে এটি লেখা ছিল এবং যা লেখা ছিল তা পরিবর্তন করা সম্ভব না।

৩- এর উপর সবর করা; যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿...وَٱصۡبِرُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ﴾

“...তোমরা সবর কর, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।” [আল-আনফাল: ৪৬]।

৪- হৃদয়কে তার রবের সাথে সংযুক্ত করা এবং তাঁর কাছ থেকে মুক্তির অপেক্ষা করা। যেমনটি তিনি হাদীসে কুদসীতে বলেছেন:

«أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي».

"আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারনা যেমন তেমনই আমি।",67 এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«وَاعْلَمْ أَنَّ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا».

"জেনে রেখো, মুসিবতের সাথেই সুখ আছে আর কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।"68

৫- অবসর সময়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বারবার আল্লাহকে স্মরণ করা, কুরআন পাঠ করা, তওবা করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা

৬- তার রোগ সম্পর্কে অভিযোগ শুধুমাত্র তার সৃষ্টিকর্তার কাছে করবে, যিনি তা দূর করতে সক্ষম। তবে শুধু তথ্য দেওয়ার জন্য কারো কাছে রোগের কথা বলা জায়েজ, যতক্ষণ না তা অভিযোগের আকারে হয়।

৭- তার উপর আল্লাহর দেওয়া সুস্বাস্থ্যের নিআমতের মূল্য উপলব্ধি করবে এবং তার অসুস্থ ভাইদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করবে।

৮- এটা জানা যে, অসুস্থতার মাধ্যমে আল্লাহ পাপ মোচন করেন এবং মন্দ কাজগুলো মুছে ফেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন:

«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى مِنْ مَرَضٍ فَمَا سِوَاهُ، إِلَّا حَطَّ اللَّهُ بِهِ سَيِّئَاتِهِ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا».

“যেকোন মুসলিম মুসিবতে আক্রান্ত হয়, চাই তা রোগ হোক কিংবা অন্য কোন কিছু, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়।”69 আরো প্রমাণিত যে, তিনি বলেছেন:

«مَا مِنْ مُصِيبَةٍ تُصِيبُ الْمُسْلِمَ إِلَّا كَفَّرَ اللهُ بِهَا عَنْهُ».

"এমন কোন বিপদ নেই যা একজন মুসলিমের উপর আসে, যার বিনিময়ে আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করেন না।"70 অর্থাৎ: তার গুনাসমূহ।

রোগী কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করবেন?

১- রোগীকে পানি ব্যবহার করে পবিত্র হওয়া ওয়াজিব, ছোট অপবিত্রতার জন্য অযু করবে এবং বড় অপবিত্রতার জন্য গোসল করবে।

২- যদি সে পানি দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করতে না পারে; তার অক্ষমতার কারণে, অথবা রোগ আরও বৃদ্ধির হওয়ার ভয়ে, অথবা তার আরোগ্য বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কায়; তাহলে সে তায়াম্মুম করবে।

৩- তায়াম্মুম করার পদ্ধতি: সে তার হাত দিয়ে পবিত্র মাটিতে একবার আঘাত করবে, এটা দিয়ে তার পুরো মুখ মুছবে, তারপর তার হাতের পৃষ্ঠদেশ একটি দিয়ে অপরটি মুছবে।

৪- যদি সে নিজেকে পবিত্র করতে অক্ষম হয়; তাহলে অন্য কেউ তাকে অযু করাবে অথবা তায়াম্মুম করাবে।

৫- যদি পবিত্রতার কোন অংশে ক্ষত থাকে; তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। যদি পানি দিয়ে ধোয়া তার উপর কোন প্রভাব ফেলে, তাহলে হাত পানিতে ভেজাবে এবং তার উপর দিয়ে মুছবে। যদি মোছাও তার ক্ষতি করে, তাহলে সে মোছার পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে।

৬- যদি তার কোন অঙ্গে ভাঙা থাকে যা কাপড় বা প্লাস্টার দিয়ে ঢাকা; সে তা ধোয়ার পরিবর্তে পানি দিয়ে মাসেহ করবে এবং তার তায়াম্মুম করার প্রয়োজন নেই। কারণ মাসেহ ধোয়ার বিকল্প।

৭- দেয়ালে অথবা ধুলোযুক্ত অন্য কোন পবিত্র জিনিসের উপর তায়াম্মুম করা জায়েয। যদি দেয়াল মাটি ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে আবরণ দেওয়া থাকে, যেমন রঙ, তাহলে ধুলো না থাকলে তার উপর তায়াম্মুম করবে না।

৮- যদি মাটি, দেয়াল বা ধুলোযুক্ত অন্য কিছুতে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয়, তাহলে পাত্রে বা রুমালে মাটি রেখে তায়াম্মুম করতে কোন অসুবিধা নেই।

৯- যদি সে সালাতের জন্য তায়াম্মুম করে এবং পরবর্তী সালাতের সময় পর্যন্ত পবিত্র থাকে; সে প্রথম তায়াম্মুম দিয়ে পরবর্তী সালাত আদায় করবে এবং দ্বিতীয় সালাতের জন্য পুনরায় তায়াম্মুম করবে না। কারণ তিনি এখনও পবিত্রতার অবস্থায় আছেন এবং এটিকে বাতিল করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি। আর যদি সে বড় নাপাকির জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে তাকে আবার তায়াম্মুম করতে হবে না, যদি না তার আবার বড় নাপাকি হয়। তবে সে এই সময়ে ছোট নাপাকির জন্য তায়াম্মুম করবে।

১০- রোগীকে তার শরীর অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করা ওয়াজিব। যদি সে তা করতে অক্ষম হয়, তাহলে সে যেমন আছে তেমনই সালাত পড়বে। তার সালাত সহীহ হবে এবং তাকে পুনরায় তা পড়তে হবে না।

১১- অসুস্থ ব্যক্তিকে পবিত্র পোশাক পরে সালাত পড়া ওয়াজিব। যদি তার পোশাক অপবিত্র হয়ে যায়, তাহলে তা ধোয়া অথবা পবিত্র কাপড় দিয়ে প্রতিস্থাপন করা ওয়াজিব। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে তিনি যেমন আছেন তেমনই সালাত আদায় করবেন এবং তার সালাত সহীহ হবে এবং তাকে পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে না।

১২- রোগীর জন্য পবিত্র কিছুর উপর সালাত আদায় করা ওয়াজিব। যদি তার স্থান অপবিত্র হয়ে যায়, তাহলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে অথবা পবিত্র কিছু দিয়ে পরিবর্তন করতে হবে অথবা তার উপর পবিত্র কিছু বিছিয়ে নিতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে সে যেমন আছে তেমনই সালাত পড়বে এবং তার সালাত সহীহ হবে এবং তাকে পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।

১৩- নিজেকে পবিত্র করতে না পারার কারণে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সালাতকে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্ব করে আদায় করা জায়েয নয়, বরং সে যতটা সম্ভব নিজেকে পবিত্র করবে, তারপর সময়মতো সালাত আদায় করবে, এমনকি যদি তার শরীরে, পোশাকে বা স্থানে এমন কোন নাপাকি থাকে যা সে অপসারণ করতে অক্ষম হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ...﴾

“অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর...।” [আত-তাগাবুন : ১৬]।

লিখেছেন আল্লাহর মুখাপেক্ষী মুহাম্মদ সালিহ আল-উসাইমীন।

তারিখ ০৯/০১/১৪০৩হি.

 

অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে সালাত আদায় করবে?

১- রোগীর উচিত ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা- তা ঝুঁকে হোক অথবা দেয়াল বা লাঠির ওপর ভর দিয়ে হোক, যদি তার দাঁড়ানোর জন্য ভর নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

২- যদি সে দাঁড়াতে অক্ষম হয়, তবে বসে নামায পড়বে। আর উত্তম হলো কিয়াম ও রুকুর স্থানে পা গুটিয়ে বসা।

৩- যদি বসে সালাত আদায় করতেও অক্ষম হয়, তবে কিবলামুখী হয়ে ডান কাতে শুয়ে সালাত পড়বে; ডান পাশ শ্রেষ্ঠতর। আর যদি কিবলামুখী হওয়াও সম্ভব না হয়, তবে যেদিকে মুখ করা অবস্থায় আছে, সেদিকেই সালাত আদায় করবে। তার সালাত সহিহ হবে, পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই।

৪- যদি সে কাত হয়ে শুয়েও সালাত আদায় করতে অক্ষম হয়, তবে পা কিবলামুখী করে চিৎ হয়ে শুয়ে সালাত পড়বে। আর যদি পা কিবলামুখী করা সম্ভব না হয়, তবে যেদিকে অবস্থান করছে, সেদিকেই সালাত আদায় করবে। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই।

৫- রোগীকে তার সালাতে রুকু ও সাজদা করতে হবে, যদি সে তা করতে অক্ষম হয়, তাহলে সে তার মাথা দিয়ে রুকু-সাজদায় ইশারা করবে এবং সাজদাকে রুকু থেকে নিচু করবে। যদি সে সাজদা না করে রুকু করতে সক্ষম হয়, তাহলে সে রুকু করার সময় রুকু করবে এবং সাজদার জন্য মাথা নেড়ে ইশারা করবে। যদি সে রুকু না করে সাজদা করতে সক্ষম হয়, তাহলে সে সাজদার সময় সাজদা করবে এবং রুকুর জন্য মাথা নেড়ে ইশারা করবে।

৬- যদি সে রুকু ও সাজদার সময় মাথা নাড়াতে অক্ষম হয়; চোখ দিয়ে ইশারা করবে, রুকু করার জন্য চোখগুলো সামান্য বন্ধ করবে এবং সাজদার জন্য চোখগুলো আরেকটু বেশি বন্ধ করবে। আর আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়, যেমন কিছু অসুস্থ মানুষ করে, এটা সঠিক নয় এবং কুরআন, সুন্নাহ অথবা আলেমদের বক্তব্যে এর কোন ভিত্তি আছে বলে আমি জানি না।

৭- যদি সে মাথা নাড়াতে বা চোখ দিয়ে ইশারা করতে অক্ষম হয়; মনে মনে সালাত পড়বে। আল্লাহু আকবার বলবে, তেলাওয়াত করবে এবং মনে মনে রুকু, সাজদা, দাঁড়ানো ও বসার নিয়ত করবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে।

৮- রোগীকে প্রতিটি সালাত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে এবং এতে যা যা ওয়াজিব তা যথাসাধ্য করতে হবে। যদি তার জন্য নির্ধারিত সময়ে প্রতিটি সালাত আদায় করা কঠিন হয়, তাহলে সে দুপুর ও আসরের সালাত এবং মাগরিব ও এশার সালাত একত্রিত করতে পারবে, হয় দুপুরের সালাতকে আসরে এবং মাগরিবের সালাতকে এশায় এগিয়ে আনবে, অথবা দুপুরের সালাতকে আসরের সালাতে এবং মাগরিবের সালাতকে এশার সময়ে বিলম্বিত করবে, যেভাবে তার জন্য সহজ হয়। আর ফজরের সালাতের ক্ষেত্রে, এটিকে তার আগে বা পরের সালাতের সাথে একত্রিত করা যাবে না।

৯- যদি রোগী তার নিজের দেশ ছেড়ে ভিন দেশে চিকিৎসার জন্য ভ্রমণকারী হন, তাহলে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাত কসর করবেন, যোহর, আসর এবং এশার দুই রাকাত সালাত পড়বেন যতক্ষণ না তিনি তার দেশে ফিরে আসেন, তার ভ্রমণের সময়কাল দীর্ঘ হোক বা সংক্ষিপ্ত।

অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে সিয়াম রাখবে?

১- অসুস্থ ব্যক্তির সিয়ামের ক্ষেত্রে তিনটি হালত রয়েছে:

প্রথম হালত: সিয়াম রাখা তার জন্য কঠিন নয় এবং এটি তার ক্ষতিও করে না, তখন তার উপর সিয়াম রাখা ওয়াজিব।

দ্বিতীয় হালত: তার উপর সিয়াম রাখা কঠিন; তখন তার জন্য সিয়াম রাখা মাকরুহ; কারণ সে আল্লাহ তা‘আলার ছাড় গ্রহণ করেনি।

তৃতীয় হালত: সিয়াম তার ক্ষতি করে; তখন তার জন্য সিয়াম রাখা নিষিদ্ধ এবং সিয়াম রাখার জন্য সে গুনাহগার হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿...وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا﴾

“...তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতি দয়ালু।” [সূরা আন-নিসা: ২৯)], এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«إِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا».

“নিশ্চয় তোমার উপর তোমার আত্মারও অধিকার আছে”। একটি দীর্ঘ হাদীস, মুত্তাফাকুন আলাইহি।71

২- যখন আল্লাহ তা‘আলা রোগীকে সুস্থ করে দিবেন, তখন তার সিয়াম কাযা করতে হবে এবং পরবর্তী রমাদান পর্যন্ত তা বিলম্বিত করা উচিত নয়।

৩- যদি সে ভবিষ্যতে তা কাযা করতে না পারে; কারণ তার অসুস্থতা নিরাময়যোগ্য নয়; সে রমাদানের প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে, যা মাসের দিনের সংখ্যার সমান। হয়তো প্রতি দিনেরটা প্রতি দিনে, অথবা মাসের শেষ দিনে, যেমন খাবার তৈরি করে মাসের দিনের সংখ্যার সমান দরিদ্রদের খাইয়ে দিবে, অথবা প্রতি দশদিন অন্তর দশজন মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে।

৪- যদি রোগী রমদানের পর সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সিয়াম রাখতে সক্ষম হয়, কিন্তু সিয়াম না রেখেই মারা গেল; তখন তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে সিয়াম রাখবে। কিন্তু যদি সে তা না করে; তার সম্পদ থেকে প্রতি দিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাবার খাওয়াবে, যদি তার অভিভাবক তাকে স্বেচ্ছায় খাবার দিয়ে অনুগ্রহ করে; তবে কোন সমস্যা নেই।

নফল সালাত

* এর ফযীলত:

আল্লাহ তা‘আলার নিজ বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত হলো: তিনি প্রতিটি ফরয ইবাদতের জন্য তার অনুরূপ নফল ইবাদত অনুমোদন করেছেন। সুতরাং সালাতের জন্য সালাত জাতীয় নফল আমল রয়েছে যা হল নফল সালাত, যাকাতের জন্য যাকাত জাতীয় নফল ইবাদত রয়েছে যা হলো সাদাকাহ, সিয়ামের জন্য সিয়াম জাতীয় নফল ইবাদত রয়েছে যা নফল সিয়াম এবং হজও অনুরূপ। এটা আল্লাহ তা‘আলার তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের অংশ; যাতে তাদের সওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পায় এবং ফরয ইবাদতের ঘাটতি সংশোধন করা। কারণ নফল ইবাদতের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন ফরয ইবাদতের পরিপূর্ণতা দেওয়া হবে।

নফল সালাতের মধ্যে রয়েছে:

১- ফরয সালাতের অনুগামী নফল সালাতসমূহ:

সেগুলো হলো: যোহরের আগে দুই সালামে চার রাকাত এবং এর ওয়াক্ত যোহরের সালাতের সময় শুরু হওয়ার পরে হয়, সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে নয় এবং তার পরে দুই রাকাত। এ হল ছয় রাকাত, এগুলি সবই যোহরের সুন্নত। আসরের ক্ষেত্রে, এর কোন সুন্নত নেই। মাগরিবের সালাতের পর দুই রাকাত এবং এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত।

ফজরের আগে দুই রাকাতের বিশেষত্ব হলো:

এই দুই রাকাত সংক্ষেপে আদায় করা ভালো,

এবং এই দুই রাকাতে পাঠ করবে:

﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡكَٰفِرُونَ 1﴾

সূরা কাফিরূন প্রথম রাকাতে, আর

﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ 1﴾

সূরা ইখলাস দ্বিতীয় রাকাতে। অথবা আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿قُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيۡنَا...﴾

অর্থ: “তোমরা বল: আমরা আল্লাহর উপর এবং যা আমাদের উপর নাযিল হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছি...।” [আল বাকারাহ : ১৩৬] প্রথম রাকাতে সূরা আল-বাকারার আয়াতটি পাঠ করা, এবং

﴿قُلۡ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۭ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ...﴾

অর্থ: “বল, হে আহলে কিতাবগণ! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে এক...।” [আলে ইমরান : ৬৪] আয়াতটি সূরা আল ইমরানের, দ্বিতীয় রাকাতে পাঠ করা।

এবং ফজরের এ সুন্নাত বাড়িতে এবং সফরে উভয় সময়ে আদায় করতে হয়।

এর ফযীলত অনেক, এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا».

"ফজরের দুই রাকাত সালাত দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।"।72

২- এ মধ্যে আরো রয়েছে: বিতর সালাত:

এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নফল সালাতের মধ্যে একটি। এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, কিছু আলিম এটিকে ওয়াজিব বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন: "যে ব্যক্তি বিতরের সালাত ত্যাগ করে সে খারাপ লোক এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।"73

রাতের সালাত বিতরের মাধ্যমে শেষ হয়। অতএব যে ব্যক্তি আশঙ্কা করে যে, সে রাতের শেষভাগে উঠতে পারবে না; সে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতরের সালাত আদায় করবে। আর যে রাতের শেষভাগে ঘুম থেকে ওঠার আশা করে; সে যেন রাতের শেষভাগে তার নফল সালাত শেষ করে বিতরের সালাত পড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«اجْعَلُوا آخِرَ صَلَاتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا».

“বিতরকে তোমাদের রাতের সর্বশেষ সালাত বানাও”।74

বিতর সর্বনিম্ন এক রাকাত, সর্বোচ্চ এগারো রাকাত এবং সর্বনিম্ন পূর্ণতা তিন রাকাত।

যদি সে তিন রাকাত বিতর পড়ে; তার এখতিয়ার আছে যে, যদি সে ইচ্ছা করে, এক বৈঠকে এক তাশাহহুদে এটি পড়তে পারে, অথবা ইচ্ছা হলে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরাবে, তারপর এক রাকাত পড়বে।

যদি সে বিতরের সালাত ভুলে যায় অথবা না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে; দিনের বেলায় এটি জোড় রাকাত হিসেবে কাযা করবে, বিজোড় সংখ্যা হিসেবে নয়। যদি সে তিন রাকাত বিতর সালাত পড়তে অভ্যস্ত হয়, তাহলে চার রাকাত সালাত কাযা করবে, আর যদি সে পাঁচ রাকাত বিতর পড়তে অভ্যস্ত হয়, ছয় রাকাত সালাত কাযা করবে, এভাবে। কারণ সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম বা ব্যথার কারণে রাতের সালাত না পড়তেন, তাহলে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত পড়তেন।75

৩- দুহার সালাত:

এটা সর্বনিম্ন দুই রাকাত, সর্বোচ্চ সীমা নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকাত দুহার সালাত পড়তেন এবং আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তা বৃদ্ধি করতেন।76

এর সময় হলো: বর্শার উচ্চতা পর্যন্ত সূর্য ওঠার সময় থেকে - অর্থাৎ: সূর্য উদিত হওয়ার প্রায় পনের মিনিট পর হতে - দুপুরের কিছুটা পূর্ব পর্যন্ত, অর্থাৎ: সূর্য ঢলে যাওয়ার প্রায় দশ মিনিট আগে বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত।

এটা শরীয়তসম্মত হওয়ার প্রমাণ হলো: আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস, তিনি বলেছেন:

«أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلَاثٍ: صِيَامِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَي الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَنَامَ».

“আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন: প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা এবং দু‘রাকাত সালাতুদ-দুহা এবং আমি যেন ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করি।”77

তাছাড়া আবূ যার রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«‌يُصْبِحُ ‌عَلَى ‌كُلِّ ‌سُلَامَى ‌مِنْ ‌أَحَدِكُمْ ‌صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى».

“প্রতিটি দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি অস্থি-বন্ধনী ও গিটের উপর সদকা ওয়াজিব হয়। সুতরাং প্রতিটি তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ’ বলা সদকা হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিটি তাহমীদ অর্থাৎ আলহমদুলিল্লাহ’ বলা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিটি ’আল্লাহু আকবার’ তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিটি ভালো কাজের আদেশ সদকা এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রতিটি প্রয়াসও তার জন্য অনুরূপ সদকা বলে গণ্য হয়। তবে ’দুহা’ বা চাশতের মাত্র দু’ রাকাআত সালাত যদি সে আদায় করে তাহলে তা এ সবগুলোর সমকক্ষ হতে পারে।”78

নিষিদ্ধ সময়সমূহ

এগুলো এমন কিছু সময়, যেগুলোতে শরিয়ত নফল সালাত পড়তে নিষেধ করেছে; বিশেষভাবে সেইসব সাধারণ নফল সালাত, যেগুলো পড়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই।

নিষিদ্ধ সময় তিনটি:

প্রথম সময়: ফজরের সালাতের পর থেকে এক বর্শা বরাবর সূর্যোদয় পর্যন্ত, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের প্রায় ১৫ মিনিট পর পর্যন্ত। ফজরের সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব সালাত।

দ্বিতীয় সময়: যখন সূর্য ঠিক মাথার উপর থাকে, তখন থেকে ঢলে যাওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ দুপুরে সূর্য ঢলে যাওয়ার প্রায় দশ মিনিট আগে, অথবা তার কাছাকাছি সময়।

তৃতীয় সময়: আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আসর বলতে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের আসর সালাত উদ্দেশ্য। সুতরাং যদি কেউ আসরের সালাত পড়ে, তাহলে তার উপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত সালাত পড়া হারাম।

কিন্তু নিম্নলিখিত সালাতগুলো ব্যতিক্রম:

১- ফরজ সালাত, যেমন: কোন ব্যক্তির কোন সালাত বাদ পড়ে যায় এবং এই সময়গুলোতে তার মনে পড়ে, তাহলে সে তা আদায় করে নিবে; কারণ সাধারণভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ نَامَ عَنْ صَلَاةٍ أَوْ نَسِيَهَا؛ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا».

"যে ব্যক্তি সালাতের সময় ঘুমিয়ে পড়ে অথবা তা ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হলেই সালাত পড়ে নেয়"।79

২- বিশুদ্ধতম মত অনুযায়ী এ বিধান থেকে ব্যতিক্রম হবে এমন সব নফল সালাত, যার কোনো নির্দিষ্ট কারণ আছে। কারণ, যে সালাতের সঙ্গে কোনো কারণ যুক্ত থাকে, তা ঐ কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত; ফলে নিষেধাজ্ঞার যে হিকমত বা উদ্দেশ্য রয়েছে, তা এখানে প্রযোজ্য হয় না। যেমন- কেউ যদি আসর সালাতের পর মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে সে দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে; কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ؛ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ».

“যখন তোমাদের কেউ মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন সে যেন দুই রাক‘আত সালাত আদায় না করে বসে না।”80 অনুরূপভাবে, যদি তুমি ফজরের সালাতের পরে অথবা সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় প্রবেশ করো তবুও।

অনুরূপভাবে যদি আসরের সালাতের পর সূর্যগ্রহণ হয়, তাহলে তার গ্রহণের জন্য সালাত পড়বে; যেহেতু এর কারণ রয়েছে।

একইভাবে, যদি কোন ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং সাজদার কোন আয়াত অতিক্রম করে, তাহলে সে এই সময়গুলোতেও সাজদা করবে; যেহেতু এর কারণ রয়েছে।

সালাত ত্যাগকারীর বিধান

প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি তার পরিবারকে সালাতের আদেশ দেয় কিন্তু তারা তার কথা না শোনে, তাহলে তার কী করা উচিত? তার কি তাদের সাথে থাকা এবং তাদের সাথে মেলামেশা করা উচিত, নাকি তার ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত?

উত্তর: যদি তারা কখনও ফরজ সালাত না পড়ে; তারা কাফের ও মুরতাদ যারা ইসলাম ত্যাগ করেছে এবং তাদের সাথে বসবাস করা জায়েয নয়।

কিন্তু তাকে অবশ্যই তাদের দাওয়াত ‍দিতে হবে, জোর দিতে হবে এবং পুনরাবৃত্তি করতে হবে, যাতে আল্লাহ তাদের পথ দেখান। কারণ কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবীদের বাণী এবং সঙ্গত যুক্তির ভিত্তিতে; যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে সে কাফের -আল্লাহ রক্ষা করুন-। এর দাবি হলো এই জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে সতর্কতা প্রয়োজন।

কুরআনের দলীল হল, মুশরিকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِ...﴾

(কিন্তু যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই...) [আত-তাওবাহ : ১১], আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থ: যদি তারা তা না করে, তাহলে তারা আমাদের ভাই নয় এবং দীনি ভ্রাতৃত্ব পাপের দ্বারা বাতিল হয় না, তা যত বড়ই হোক না কেন, বরং ইসলাম ত্যাগ করার মাধ্যমে তা বাতিল হয়।

সুন্নাহের দলীল হলো, মুসলিম কর্তৃক সংকলিত জাবির রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلَاةِ».

"মানুষ এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।",81 এবং সুনান গ্রন্থসমূহে বুরাইদা রদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীসে তার বাণী:

«الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ: الصَّلَاةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ».

“তাদের ও আমাদের মধ্যে প্রতিশ্রুতি হচ্ছে সালাত; যে তা পরিত্যাগ করল, সে কুফুরী করল।”।82

আর সাহাবীদের বাণী হলো, আমিরুল মুমিনীন ওমার রদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: "যে সালাত ত্যাগ করে তার ইসলামে কোন অংশ নেই।"83 الحَظُّ (অংশ): এখানে حَظُّ শব্দটি নাকিরাহ এবং নাফীর পরে আসার কারণে তার অর্থে ব্যপকতা হবে। অর্থাৎ ইসলামের তার কম-বেশী কোন অংশ নেই।

আব্দুল্লাহ ইবনু শাকিক বলেন: "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত অন্য কোনও কাজকে কুফরী মনে করতেন না।"।84

যুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে: এটা কি অনুমেয় যে, যার হৃদয়ে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে এবং যে সালাতের মাহাত্ম্য এবং এর প্রতি আল্লাহর গুরুত্ব সম্পর্কে জানে, তারপরও সে সম্পূর্ণরূপে সালাত পরিত্যাগ করে?! এটা সম্ভব নয়।

যারা বলে যে তিনি কাফির হবেন না, আমি তাদের দলীলগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছি এবং আমি দেখেছি যে এটি পাঁচটি হালতের বাইরে যায় না:

১- হয় এতে তার পক্ষে মূলত কোন দলীল নেই।

২- অথবা এমন কোনো বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে দলীলটি সম্পর্কিত, যার কারণে নামায ত্যাগ করা সম্ভব নয়।

৩- অথবা এটি এমন পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ ছিল যেখানে এই সালাত ত্যাগ করার ওযর গৃহীত হয়।

৪- অথবা এটি ব্যাপক, তাই সালাত ত্যাগকারীর কুফরি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস দ্বারা তা খাস করা হবে।

৫- অথবা এটি দুর্বল, যা সহীহ হাদীসের বিপরীতে কার্যকর নয়।

কোন প্রামাণ্য দলীলে এমন কিছু নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে সে মুমিন, অথবা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথবা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, অথবা এই ধরণের কিছু, যা আমাদেরকে সালাত ত্যাগকারীর কুফরীকে নিআমতের প্রতি কুফরী, অথবা কুফরী অপেক্ষা ছোট কুফরী হিসাবে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য করে।

কাজেই যখন এটা স্পষ্ট হল যে, সালাত ত্যাগকারী একজন কাফের ও ধর্ম ত্যাগকারী মুরতাদ, কাজেই তার উপর ধর্মত্যাগীদের বিধান প্রযোজ্য হবে, যার মধ্যে রয়েছে:

প্রথমত: তাকে বিয়ে করা বৈধ নয়, যদি তার সাথে বিবাহ বন্ধন হয় অথচ সে সালাত পড়ে না, তাহলে বিবাহ বাতিল হবে এবং এ কারণে স্ত্রী তার জন্য জায়েয হবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা হিজরতকারী নারীদের সম্পর্কে বলেছেন:

﴿...فَإِنۡ عَلِمۡتُمُوهُنَّ مُؤۡمِنَٰتٖ فَلَا تَرۡجِعُوهُنَّ إِلَى ٱلۡكُفَّارِۖ لَا هُنَّ حِلّٞ لَّهُمۡ وَلَا هُمۡ يَحِلُّونَ لَهُنَّ...﴾

(... অতঃপর যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা মুমিন নারী, তবে তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। মুমিন নারীগণ কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিরগণও মুমিন নারীদের জন্য বৈধ নয়...) [আল-মুমতাহিনা : ১০]।

দ্বিতীয়ত: বিবাহ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি সে সালাত ত্যাগ করে, তাহলে তার বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রী তার জন্য বৈধ থাকবে না। আমরা পূর্বে যে আয়াত উল্লেখ করেছি এবং আলিমগণ সহবাসের আগে বা পরে মর্মে আয়াতের যে ব্যাখ্যা পেশ করেছেন তার আলোকে।

তৃতীয়ত: এই ব্যক্তি যে সালাত পড়ে না, তার জবাই করা পশু খাওয়া যাবে না; কারণ এটি হারাম। যদি কোন ইহুদি বা খ্রিস্টান জবাই করে, তাহলে তার জবাই আমাদের জন্য জায়েয, তাই - আল্লাহ না করুন - তার জবাই ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জবাইয়ের চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট।

চতুর্থত: তার জন্য মক্কা বা তার পবিত্র স্থানের সীমানায় প্রবেশ করা জায়েয নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡمُشۡرِكُونَ نَجَسٞ فَلَا يَقۡرَبُواْ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هَٰذَا...﴾

(হে ঈমানদারগণ ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র; কাজেই এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল হারামের ধারে-কাছে না আসে...) [আত-তাওবাহ : ২৮]।

পঞ্চমত: যদি তার কোন নিকট আত্মীয় মারা যায়, তাহলে তার কাছ থেকে উত্তরাধিকার লাভের কোন অধিকার থাকবে না। যদি কোন মুসলিম পুরুষ যিনি সালাত পড়েন এমন এক পুত্র রেখে মারা যান যে সালাত পড়ে না এবং একজন দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই (আত্মীয়) রেখে যান, তাহলে তার উত্তরাধিকার কে পাবে?

উত্তর: তার দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই পাবে, তার ছেলে নয়; কারণ উসামা (রদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَا يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِـرَ، وَلَا الْكَافِـرُ الْمُسْلِمَ».

"একজন মুসলিম কাফের থেকে কোন উত্তরাধিকার পায় না এবং একজন কাফেরও মুসলিম থেকে উত্তরাধিকার পায় না।" মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি,85 অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«أَلْحِقُـوا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا، فَمَا بَقِيَ فَلِأَوْلَى رَجُلٍ ذَكَرٍ».

“সুনির্দিষ্ট অংশের হকদারদের মীরাস পৌঁছে দাও। অতঃপর যা বাকী থাকবে তা (মৃতের) নিকটতম পুরুষের জন্য”। মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি,86 এটি এমন এক উদাহরণ যা সকল উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ষষ্ঠত: যদি সে মারা যায়, তাহলে তাকে গোসল করানো হবে না, কাফন দেওয়া হবে না, (জানাযার) সালাত পড়া হবে না এবং মুসলিমদের সাথে দাফন করা হবে না। তাহলে, তাকে নিয়ে আমাদের কী করা উচিত?

উত্তর: আমরা তাকে মরুভূমিতে নিয়ে যাব, তার জন্য একটি কবর খনন করব এবং তার পোশাকেই তাকে কবর দিব; কারণ তার কোন সম্মান নেই। অতএব, যার কাছে কোন মৃত ব্যক্তি থাকে এবং সে জানে যে সে সালাত পড়ত না, তার জন্য তাকে মুসলমানদের কাছে উপস্থাপন করা জায়েয নয় যাতে তারা তার জানাজার সালাত পড়ে।

সপ্তমত: কিয়ামতের দিন তাকে ফেরাউন, হামান, কারুন এবং উবাই ইবনে খালফের সাথে একত্রিত করা হবে, যারা কুফরের নেতা ছিল - আল্লাহ না করুন - এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার পরিবারের কারোর পক্ষে তার জন্য রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েয নয়; কারণ সে একজন কাফের এবং এর যোগ্য নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:87

﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسۡتَغۡفِرُواْ لِلۡمُشۡرِكِينَ وَلَوۡ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرۡبَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُمۡ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَحِيمِ 113﴾

(নবী ও মুমিনদের জন্য এটা শোভা পায় না যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে- যদিও তারা আত্মীয়-স্বজন হোক- যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী।) [আত-তাওবা : ১১৩]।

কাজেই হে আমার ভাইয়েরা, এই বিষয়টি খুবই গুরুতর এবং দুর্ভাগ্যবশত কিছু লোক এই গুরুতর বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়।

কিন্তু তাওবার দরজা খোলা আছে - আল-হামদুলিল্লাহ - যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ شَيۡـٔٗا٦٠ جَنَّٰتِ عَدۡنٍ ٱلَّتِي وَعَدَ ٱلرَّحۡمَٰنُ عِبَادَهُۥ بِٱلۡغَيۡبِۚ إِنَّهُۥ كَانَ وَعۡدُهُۥ مَأۡتِيّٗا٦١ لَّا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوًا إِلَّا سَلَٰمٗاۖ وَلَهُمۡ رِزۡقُهُمۡ فِيهَا بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا 62﴾

(তাদের পরে আসলো তাদের উত্তরসূরিরা। তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার সম্মুখীন হবে।*

কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে। তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।*

এটা স্থায়ী জান্নাত, যে গায়েবী প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন। নিশ্চয় তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় আসবেই।*

সেখানে তারা সালাম তথা শান্তি ছাড়া অন্য কোন অসার বাক্য শুনবে না এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে তাদের রিযিক।) [মারইয়াম: ৫৯-৬২]।

পরিশেষে, আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের এবং আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে এমনভাবে তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দান করেন যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। আর আল্লাহই ভালো জানেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ, তার পরিবারবর্গ এবং তার সকল সাহাবীর উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক।

মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসাইমীন

তাওবা

তাওবা হল: আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা থেকে তাঁর আনুগত্যে ফিরে আসা।

প্রতিটি মুমিনের উপর তওবা করা আবশ্যক।

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا...﴾

(হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর-বিশুদ্ধ তাওবা...) [আত-তাহরীম: ৮]।

মহান আল্লাহর কাছে তাওবা প্রিয়,

﴿...إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلۡمُتَطَهِّرِينَ﴾

(...নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবাকারীদেরকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন।) [আল-বাকারাহ : ২২২]।

তাওবা সাফল্যের অন্যতম কারণ,

﴿...وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾

(...হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার) [আন-নূর : ৩১], সাফল্য হল: মানুষের জন্য তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভ করা এবং তার ভয়ঙ্কর বস্তু থেকে মুক্তি পাওয়া।

তাওবার কারণেই আল্লাহ পাপ ক্ষমা করেন, তা সে যত বড় বা যত বেশীই হোক না কেন।

﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ 53﴾

(বলুন, 'হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।) [আয-যুমার : ৫৩], হে আমার পাপী ভাই, তোমার রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। পশ্চিম দিক থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত তওবার দরজা খোলা থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إنَّ اللَّهَ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ؛ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ؛ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا».

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হাত রাতে প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধীরা তাওবা করে এবং দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধীরা তাওবা করে, [এমন করতে থাকবেন] যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে।” সহীহ মুসলিম।88

কত মানুষ অনেক বড় পাপ থেকে তওবা করেছে এবং আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেছেন! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا٧٠﴾

(আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা হারাম করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। উপরন্তু তারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা (এ সকল বড় অপরাধ) করবে, সে (অবশ্যই কিয়ামত দিবসে ) শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।*

কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বর্ধিতভাবে প্ৰদান করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।*

তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্‌ তাদের পাপসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু্।) [আল-ফুরকান: ৬৮-৭০]।

বিশুদ্ধ তওবা হলো এমন তওবা যেখানে পাঁচটি শর্ত পূরণ করা হয়:

প্রথম: আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ইখলাস, যেন তার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, তাঁর সাওয়াব এবং তাঁর শাস্তি থেকে মুক্তির নিয়ত করে।

দ্বিতীয়: পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, যাতে তা করার জন্য দুঃখিত হয় এবং কামনা করে যে, যদি সে তা না করত।

তৃতীয়: অবিলম্বে পাপ ত্যাগ করা। যদি এটি আল্লাহর হক হয়, তাহলে যদি এটি একটি হারাম কাজ হয়, তবে তার তা পরিত্যাগ করা উচিত এবং যদি এটি একটি ওয়াজিব পরিত্যাগ করা হয় তবে তা সম্পাদনের জন্য তার তাড়াহুড়া করা উচিত। যদি এটি কোন মাখলূকের হক হয়, তাহলে তার উচিত দ্রুত তার থেকে মুক্ত হওয়া, হয় তাকে ফিরিয়ে দিয়ে অথবা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তার সাথে সমাধান করে নিয়ে।

চতুর্থ: ভবিষ্যতে সেই পাপে ফিরে না যাওয়ার সংকল্প করা।

পঞ্চম: তাওবা কবুলের সময় শেষ হওয়ার পরে যেন না হয়; হয় মৃত্যুর সময় উপস্থিতির মাধ্যমে, অথবা পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের মাধ্যমে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّـَٔاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ...﴾

(তাওবাহ্‌ তাদের জন্য নয় যারা মন্দ কাজ করে চলে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, ‘আমি এখন তাওবাহ্‌ করছি...) [আন-নিসা : ১৮], আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا؛ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ»

“যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা গ্রহণ করবেন”। সহীহ মুসলিম,89 হে আল্লাহ, আমাদেরকে বিশুদ্ধ তওবার দিকে পরিচালিত করুন এবং তা কবুল করুন। আপনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

লিখেছেন: মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ আল-উসাইমীন

তারিখ ১৭/০৪/১৪০৬হি.

তৃতীয় অনুচ্ছেদ: জানাযা

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার বিধান।

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর নিয়ম।

মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম।

মৃত ব্যক্তির জানাযা সালাতের বিবরণ

মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার নিয়ম

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার বিধান।

সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, তিনি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের উপাস্য। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, নবীদের মধ্যে সর্বশেষ আগমনকারী এবং মুত্তাকীদের ইমাম। তার উপর, তার পরিবারবর্গের উপর, তার সঙ্গীদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা ন্যায়ের সাথে তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার উপর আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন। অতপর:

এটি মৃতদের গোসল, কাফন ও দাফন সংক্রান্ত একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা। মূল বিষয় শুরু করার আগে আমরা কয়েকটি কথা উপস্থাপন করব:

১- মৃত মুসলিমকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো এবং দাফন করা একটি ফরযে কিফায়াহ। অতএব, যে কেউ এটি আঞ্জাম দেয় তার উচিৎ নিয়ত করা যে, সে এই দায়িত্ব পালন করছে; যাতে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে এর বিনিময় ও প্রতিদান লাভ করে। কাফিরকে মুসলিমদের ন্যায় গোসল দেওয়া, কাফন পরানো বা মুসলিমদের সাথে দাফন করা জায়েয নেই।

২- গোসলদাতা মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে আমানতদার, তাই তার উপর তাকে গোসল দেওয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে যা প্রয়োজন তা করা ওয়াজিব।

৩- গোসলদাতা মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে আমানতদার, তাই তার উপর আবশ্যক হলো তার মধ্যে অপ্রীতিকর যা দেখবে তা আড়াল করে রাখা।

৪- গোসলদাতা মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে আমানতদার, তাই তার উচিত গোসল দেওয়ার সময় মৃতদেহ উল্টে দিতে, পানি ঢালতে, ইত্যাদি সাহায্য করার জন্য যাদের প্রয়োজন তাদের ছাড়া অন্য কাউকে তার সাথে উপস্থিত থাকতে না দেওয়া।

৫- গোসলদাতা মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে আমানতদার, তাই তার উচিত তার প্রতি কোমল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তার কাপড় খোলার সময়, তাকে ধোয়ার সময় বা অন্য কোনও কিছু করার সময় তার প্রতি হিংস্র বা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ না করা।

৬- কোন পুরুষ তার স্ত্রী ছাড়া কোন মহিলাকে গোসল দিবে না এবং একজন মহিলাও তার স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে গোসল দিবে না, তবে সাত বছরের কম বয়সী মৃত ছাড়া। এক্ষেত্রে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা তাকে গোসল দিবে, মৃত পুরুষ হোক বা নারী।

৭- গোসলের কাজ শেষ হলে গোসলদাতার ফরজ গোসলের ন্যায় গোসল করা মুস্তাহাব। যদি সে গোসল না করে, তাহলে তার কোন দোষ নেই।

মৃতকে গোসল দেওয়ার নিয়ম

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল: তার পুরো শরীর পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পানি দিয়ে ধৌত করা। এক্ষেত্রে নিম্নের কাজগুলো করা উত্তম:

১- মৃত ব্যক্তিকে যে জিনিসের উপর গোসল দিতে চায় তার উপর শুইয়ে তার পায়ের দিকে নীচু করে রাখবে।

২- মৃত ব্যক্তির কাপড় খুলে ফেলার আগে মৃত ব্যক্তির গোপনাঙ্গের উপর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটি কাপড় জড়িয়ে রাখবে; যাতে খুলে ফেলার পর তার গোপনাঙ্গ দেখা না যায়।

৩- মৃত ব্যক্তির পোশাক আলতো করে খুলবে।

৪- গোসলদাতা তার হাতের উপর একটি কাপড় জড়িয়ে রাখবে, তারপর মৃত ব্যক্তির গোপনাঙ্গ খোলা না রেখে ধুয়ে ফেলবে যতক্ষণ না সে তা পরিষ্কার করে, তারপর কাপড়টি ফেলে দিবে।

৫- একটি কাপড় পানিতে ভিজিয়ে মৃত ব্যক্তির দাঁত ও নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করতে হবে।

৬- মৃত ব্যক্তির মুখমন্ডল, কনুই পর্যন্ত হাত, তার মাথা এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করা। বাম হাতের আগে ডান হাত এবং বাম পায়ের আগে ডান পা ধৌত করবে।

৭- মৃত ব্যক্তির মুখে বা নাকে পানি দেবে না; শুধু একটা ন্যাকড়া দিয়ে পরিষ্কার করবে।

৮- শরীরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে সে তার পুরো শরীর তিন, পাঁচ, সাত বা তার বেশি বার ধৌত করবে। বাম দিকের আগে শরীরের ডান দিক ধৌত করবে।

৯- গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানি বরই পাতার সাথে মিশিয়ে নেওয়া উত্তম; যেহেতু এটি পরিস্কারে বেশি কার্যকর, তাই সে বরই পাতা মিশ্রিত পানি হাত দিয়ে নাড়বে যতক্ষণ না ফেনা বের হয়, তারপর সে ফেনা দিয়ে তার মাথা এবং দাড়ি আর বাকি অংশ দিয়ে শরীরের বাকি অংশ ধৌত করবে।

১০- শেষ ধোয়ার সাথে কর্পূর, যা এক প্রকারের সুপরিচিত সুগন্ধি, মিশিয়ে নেওয়া ভালো।

১১- যদি মৃত ব্যক্তির চুল থাকে; তা আঁচড়াবে, বাঁধবে না এবং এর থেকে কোন অংশ কাটবে না।

১২- মৃত ব্যক্তি যদি নারী হয়, তাহলে তার চুল যদি বেণী করা থাকে তা খুলে ফেলবে। যখন এটি ধুয়ে পরিষ্কার করবে তখন এটিকে তিনটি বেণীতে বেঁধে তার পিঠের পিছনে রাখবে।

১৩- যদি মৃত ব্যক্তির কিছু অঙ্গ আলাদা হয়, তাহলে তা ধুয়ে তার সাথে সংযুক্ত করা হবে।

১৪- যদি মৃতদেহ আগুনে দগ্ধ বা অন্য কারণে পঁচে যায় এবং গোসল করানো সম্ভব না হয়; অনেক আলিমের মতে, তখন তায়াম্মুম করা হবে। তায়াম্মুমকারী ব্যক্তি তার হাত দিয়ে মাটিতে আঘাত করবে এবং মৃত ব্যক্তির মুখমন্ডল ও হাত মুছে দিবে।

মৃতকে কাফন পরানোর নিয়ম

মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল: এমন একটি কাপড় নেয়া যা তার পুরো শরীর ঢেকে রাখে, তবে সর্বোত্তম হল নিম্নরূপ:

১- মৃত ব্যক্তিকে তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন দেওয়া হবে। কাপড়গুলো একটির উপর আরেকটি রেখে তার উপর মৃতদেহ রাখা হবে। এরপর উপরের কাপড়ের ডান পাশের প্রান্তটি মৃতদেহের ডান দিক থেকে এনে বুকে আনা হবে, তারপর বাম পাশের প্রান্তটি এনে তার উপর দেওয়া হবে। এরপর দ্বিতীয় কাপড়েও একইভাবে করা হবে, তৃতীয় কাপড়েও তাই করা হবে। তারপর মাথার দিক থেকে এবং পায়ের দিক থেকে কাপড়ের প্রান্তগুলো ভাঁজ করে এনে বেঁধে দিবে।

২- কাফনগুলো ধূপ দিয়ে ধুনো করবে এবং তার মাঝে কিছু হানুত ছিটিয়ে দিবে। হানুত হলো মৃতদের জন্য তৈরি বিশেষ সুগন্ধির মিশ্রণ।

৩- মৃত ব্যক্তির মুখমণ্ডল, শরীরের ভাঁজে এবং সাজদা করার স্থানে হানুত লাগাবে।

৪- তার চোখ, নাকের ছিদ্র এবং ঠোঁটে তুলোর মধ্যে করে কিছু হানুত লাগাবে।

৫- তার নিতম্বের মাঝখানে তুলোর মধ্যে কিছু হানুত রাখবে এবং একটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিবে।

৬- একজন নারীকে পাঁচটি কাপড় দিয়ে আবৃত করা হবে: একটি ইযার (শায়া), একটি উড়না, একটি জামা এবং দুটি চাদর। যদি তাকে পুরুষের মতো করে কাফন পরানো হয়, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

৭- মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় কাফনের গিঁট খুলে দিবে।

মৃত ব্যক্তির উপর (জানাযার) সালাতের বিবরণ

১- মৃত মুসলিমের জানাযার সালাত পড়া হবে, সে ছোট হোক বা বড়, পুরুষ হোক বা নারী।

২- চার মাস বয়সে পৌঁছে যাওয়া ভ্রূণের গর্ভপাত হলে, তার জন্য জানাযার সালাত পড়তে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যা করা হয়, তার জন্যও তাই করা হবে। জানাযার সালাত পড়ার আগে কাফন পরাতে হবে।

৩- চার মাস পূর্ণ হওয়ার আগে যদি গর্ভপাত হয়, তাহলে তার জানাযা হবে না। কারণ তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়নি এবং তাকে গোসল করানো হবে না, কাফনও দেওয়া হবে না, বরং তাকে যে কোনো জায়গায় দাফন করা হবে।

৪- জানাযার সালাতের সময় ইমাম পুরুষের মাথার কাছে এবং মহিলার মাঝখানে দাঁড়াবে এবং লোকেরা তার পিছনে সালাত পড়বে।

৫- জানাযার সালাতে চারটি তাকবীর বলবে। প্রথম তাকবীরে আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ-এর পর সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করবে।

এবং দ্বিতীয় তাকবীরের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পাঠ করবে এই বলে:

«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ؛ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ؛ إنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ؛ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ؛ إنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ».

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন; কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহিমা, ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহিমা; ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন; কামা বারাক্তা ‘আলা ইবরাহিমা, ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহিমা; ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।” অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের ওপর এবং মুহাম্মাদের বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম এবং ইবরাহীমের বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের বংশধরদের ওপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম এবং ইবরাহীমের বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।”।90

তৃতীয় তাকবীরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দোয়া পড়া উত্তম; যদি তা না জানে, তবে যা জানে তা দিয়ে দোয়া করবে।91

চতুর্থ তাকবীরের পরে তিনি (ইমাম) কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন, তারপর সালাম ফেরাবেন। আর যদি সে সালামের আগে বলে:

«رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ».

“হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন আর আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”;92 এতে কোনও দোষ নেই।

মৃতকে দাফন করার নিয়ম

১- মৃত ব্যক্তিকে এমন একটি কবরে দাফন করতে হবে যা তাকে বন্য প্রাণী থেকে রক্ষা করে, কিবলার দিকে মুখ করে। কবর যত গভীর হবে, ততই ভালো।

২- কবরটি লাহদ হওয়াই উত্তম, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জন্য কবরের গভীরে কিবলার দিকে একটি গর্ত খনন করবে।

৩- কবরকে শাক্ক করাও বৈধ, আর তা হল কবরের মাঝখানে মৃত ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন সাপেক্ষে একটি গর্ত খনন করা, যেমন মাটি নরম হলে।

৪- মৃত ব্যক্তিকে তার কবরে ডান দিকে কিবলার দিকে মুখ করে রাখতে হবে।

৫- তার উপর ইট স্থাপন করা হবে এবং তার মধ্যবর্তী স্থানটি কাদামাটি দিয়ে পূর্ণ করা হবে, যাতে মৃত ব্যক্তির উপর মাটি না পড়ে।

৬- এরপর কবরটি বন্ধ করতে হবে, উঁচু করা যাবে না, প্লাস্টার বা অন্য কিছু দিয়ে শক্ত করা হবে না।

৭- তিনটি সময়ে দাফন করা বৈধ নয়:

যখন সূর্য উদিত হয়, যতক্ষণ না তা একটি বর্শার সমান উচ্চতায় উঠে যায়।

সূর্য মাথার উপর স্থির হওয়ার পর থেকে ঢলে যাওয়া পর্যন্ত।

আর যখন সূর্যাস্তের সময় সূর্যের উপর একটি বর্শার সমান অংশ বাকি থাকে, যতক্ষণ না সেটি অস্ত যায়।

প্রথম ও শেষ এই দু’টি সময়ের পরিমাণ হল প্রায় ১৫ মিনিট এবং দ্বিতীয়টির পরিমাণ হল প্রায় দশ মিনিট বা তার কাছাকাছি।

৮- কাফিরকে মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না; যেমন তাকে গোসল করানো হবে না, কাফন পরানো হবে না এবং তার জানাযা পড়া হবে না। বরং, তাকে এমন জায়গায় সমাহিত করা হবে যা কারও মালিকানাধীন নয়, যদি না তাকে তার দেশে স্থানান্তর করা হয়।

পরিশেষে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য, আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর, তার পরিবারবর্গ ও সকল সাহাবীর উপর।

লিখেছেন- আল্লাহর দয়ার মুখাপেক্ষী

মুহাম্মাদ সালিহ আল-উসাইমীন

 

 

***

সূচিপত্র

 

ভূমিকা 2

প্রথম পরিচ্ছেদ: পবিত্রতা 5

অযু 6

গোসল 9

তায়াম্মুম 11

মোজার উপর মাসেহ করা: 15

মোজা, পাগড়ি এবং ব্যান্ডেজে মাসেহ করা সম্পর্কে একগুচ্ছ প্রশ্ন 20

মোজার উপর মাসেহ করা 21

পাগড়ীর উপর মাসেহ করা 31

ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করা 32

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: সালাত 35

সালাত 35

সাহু সাজদার বিধানসমূহ 57

তিলাওয়াতের সাজদা 63

* তিলাওয়াতে সাজদার বিবরণ: 64

মুসাফিরের সালাত সিয়াম 67

বিমানে ভ্রমণকারী ব্যক্তি কীভাবে সালাত আদায় করবে? 70

বিমানে ভ্রমণকারী ব্যক্তি হজ্জ ওমরার জন্য কীভাবে ইহরাম বাঁধবেন? 71

অসুস্থতা এবং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা 72

রোগী কীভাবে পবিত্রতা হাসিল করবেন? 74

অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে সালাত আদায় করবে? 77

অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে সিয়াম রাখবে? 78

নফল সালাত 80

* এর ফযীলত: 80

নফল সালাতের মধ্যে রয়েছে: 80

নিষিদ্ধ সময়সমূহ 84

সালাত ত্যাগকারীর বিধান 86

তাওবা 93

তৃতীয় অনুচ্ছেদ: জানাযা 97

মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার বিধান 97

মৃতকে গোসল দেওয়ার নিয়ম 98

মৃতকে কাফন পরানোর নিয়ম 100

মৃত ব্যক্তির উপর (জানাযার) সালাতের বিবরণ 101

মৃতকে দাফন করার নিয়ম 104

 

 

***


মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, অযুর পরে মুস্তাহাব যিকরের অনুচ্ছেদ (২৩৪), «ٱللَّهُمَّ ٱجْعَلْنِي مِنَ ٱلتَّوَّابِينَ، وَٱجْعَلْنِي مِنَ ٱلْمُتَطَهِّرِينَ» অংশ বাদে। এই অংশটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী, কিতাবুত তাহারাত, অনুচ্ছেদ: অযুর পরে কী বলা হবে, (৫৫)।

মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, অযুর পানির সাথে গুনাহ বের হয়ে যাওয়া- অনুচ্ছেদ (২৪৫)।

আবূ ইয়ালা (১/৩৭৯, হাদীস৪৮৮), বাযযার (২/১৬১), হাদীস (৫২৮), হাকিম, আল-মুসতাদরাক (১/১৩২)।

বুখারী, অধ্যায়: তায়াম্মুম, অনুচ্ছেদ: আল্লাহর বাণী: “যদি তোমরা পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তয়াম্মুম করবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত করবে এবং তোমাদের হাত ধৌত করবে।”, হাদীস (৩৩৫), মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল মাসাজিদ (৫২১), জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত।

পূর্বে এর সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।

বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুত তায়াম্মুম, অনুচ্ছেদ: বাসস্থানে পানি না পেলে তায়াম্মুম, হাদীস (৩৩৭), মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল হায়েজ, অনুচ্ছেদ: তায়াম্মুম, হাদীস (৩৬৯)।

বুখারী, অধ্যায়: অযু, অনুচ্ছেদ: যখন পা দুটি পবিত্র অবস্থায় দাখিল করা হয়, হাদীস (২০৬), মুসলিম, অধ্যায়: তাহারাত, খুফফাইনের উপরে মাসেহ করা, হাদীস (৭৯/২৭৪)।

নাফি, ইবনু আমির ও হাফস আসিম ও কিসায়ী থেকে নসব দিয়ে পাঠ করেছেন। আর ইবনু কাছীর, আবু আমর ও শু‘বাহ আসিম ও হামযা থেকে কাসরাহ দিয়ে পাঠ করেছেন। “আল-কাশফ আন উজুহিল কিরাআতিস সাব‘য়ি” (১/৪০৬)।

তাওদী ইবনু সূওদাহর কবিতা, সহীহ বুখারীর টিকা (১/১২৫)।

প্রাগুক্ত (পৃ.১৮০)

আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাত, অনুচ্ছেদ: জুতা পরিধান করে সালাত আদায় করা, হাদীস (৬৫০), আহমাদ (৩/২০), আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত।

তিরমিযী, কিতাবুত তাহারাত, খুফফাইনের উপরে মাসেহ করা, হাদীস (৯৬), নাসাঈ, কিতাবুত তাহারাত, খুফফাইনের উপরে মাসেহ করার সময়সীমা, হাদীস (১২৭), ইবনু মাজাহ, কিতাবুত তাহারাত, ঘুম থেকে উঠে অযু করা, হাদীস (৪৭৮), আহমাদ (৪/২৩৯)।

মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, অনুচ্ছেদ: খুফফাইনের উপরে মাসেহ করার সময়সীমা, হাদীস (২৭৬)।

প্রাগুক্ত (পৃ.: ১৮০)।

প্রাগুক্ত (পৃ.২০)।

বুখারী: ওযু অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্দেহজনিত কারণে ওযু না করা, হাদীস (১৩৭), মুসলিম, হায়েজ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: কোন ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জনের পরে নিশ্চিত না হলে সন্দেহের কারণে ঐ ওযু দিয়েই সালাত আদায় করবে, হাদীস (৩৬১), হাদিসটি আব্দুল্লাহ ইবন জায়েদ রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত।

প্রাগুক্ত (পৃ.১৮০)।

আবূ দাউদ, পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: কিভাবে মাসেহ করতে হয়? হাদীস (১৬২)।

ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস (১/৩২৩)।

ইবনু আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, হাদীস (১/১৮৬), আরো দেখুন: আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীস (১/২৭২)।

প্রাগুক্ত (পৃ.২১)

আল-ফুরু‘ (১/২১৮)।

আল-মুকনি ও আশ-শারহুল কাবীর সংযুক্ত আল-ইনসাফ (১/৩৮৭), মুনতাহাল ইরাদাত -বাহুতির ব্যাখ্যাসহ (১/১২২)

বুখারী: নামাজের সময় অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: মুসল্লী যখন তার রবের সাথে গোপনে কথা বলে, হাদীস (৫৩১)। মুসলিম: মসজিদ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: মসজিদে থুথু ফেলা নিষেধ, হাদীস (৫৫১)। হাদীসটি আনাস রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।

মুসলিম, সালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: সূরা ফাতিহা পাঠ আবশ্যক হওয়া, হাদীস (৩৮/৩৯৫)। হাদীসটি আবু হুরাইরা রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন।

মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: ওযুর ফযীলত, হাদীস (২২৩) আবূ মালিক আল-আশআরী রদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদীস।

আহমাদ, আল-মুসনাদ, (২/১৬৯), আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীস।

নাসাঈ, নারীদের সাথে সদাচরণ অধ্যায়, প্রশান্তি: স্ত্রীদের ভালোবাসা, হাদীস (৩৩৯২), আহমাদ, আল-মুসনাদ, (৩/১২৮), আনাস রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

বুখারী: নামাজের সময় অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কাফফারা, হাদীস (৫২৮), মুসলিম: মসজিদ প্রসঙ্গ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: সালাতের দিকে গমন করলে পাপ ক্ষমা হওয়া, হাদীস (৬৬৭), আবূ হুরাইরা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত।

মুসলিম: পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, জুমু‘আহ থেকে অপর জুমু‘আহ এদের মধ্যবর্তী সময়ের কাফফারা, হাদীস (২৩৩), হাদীসটি আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত।

বুখারী: আযান অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: জামা‘আতের ফযীলত, হাদীস (৬৪৫), মুসলিম: মসজিদ প্রসঙ্গ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত, হাদীস (৬৫০)।

মুসলিম: মসজিদ প্রসঙ্গ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ: জামা‘আতে সালাত আদায় করা নবীর পথ-পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত, হাদীস (৬৫৪)।

সহীহ বুখারী: অধ্যায়: ওহীর সূচনা, অনুচ্ছেদ: ওহীর সূচনা কিভাবে হয়েছিল, হাদিস নং (১)। সহীহ মুসলিম: অধ্যায়: নেতৃত্ব, অনুচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— “নিশ্চয়ই আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল”, হাদিস নং (১৯০৭)। উমার ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

সহীহ বুখারী: অধ্যায়: আযান, অনুচ্ছেদ: একাধিক ব্যক্তি সফরে থাকলে তাদের আযান প্রসঙ্গ, হাদীস নং (৬৩১)। মালিক ইবনু হুওয়াইরিস রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

সহীহ বুখারী: অধ্যায়: আযান, অনুচ্ছেদ: তাকবীরের পর কী বলা হবে, হাদীস নং (৭৪৪)। সহীহ মুসলিম: অধ্যায়: মসজিদসমূহ, অনুচ্ছেদ: তাকবীরাতুল ইহরাম ও কিরআতের মাঝে কী বলা হবে, হাদীস নং (৫৯৮)।, আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

আবূ দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: যে “সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহাদিকা” দ্বারা সালাত শুরু করে, হাদীস (৭৭৫), তিরমিযী, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: সালাতের শুরুতে যা বলতে হবে, হাদীস (২৪২), নাসাঈ, সালাত শুরু, অনুচ্ছেদ: কিরাআত ও সালাত শুরুর মাঝখানে যে যিকর করতে হয়, তার অপর একটি প্রকার, হাদীস (৯০০), ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: সালাত প্রতিষ্ঠা, অনুচ্ছেদ: সালাতের শুরু, হাদীস (৮০৪), আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস (৩/৫০), হাদীসটি আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। অনুরূপ আবূ দাউদ, প্রাগুক্ত, হাদীস (৭৭৬), তিরমিযী, প্রাগুক্ত, হাদীস (২৪৩), ইবনু মাজাহ, প্রাগুক্ত, হাদীস (৮০৬), এই হাদীস আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত। আবার মুসলিম বর্ণনা করেছেন কিতাবুস সালাত-এ, অনুচ্ছেদ: যারা বলেন বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়া হবে না- এর প্রমাণ, হাদিস নং (৩৯৯)। এটি উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমল থেকে মাওকূফভাবে বর্ণিত, তবে এর সনদে ত্রুটি রয়েছে।

বুখারী, হাদীস (৭৬১), মুসলিম, হাদীস (৪৮৪)।

মুসলিম, হাদীস (৪৮৭); আবু দাউদ, হাদীস (৮৭২)

মুসলিম, হাদীস (৪৭১), আবূ দাউদ, হাদীস (৭৬০)।

মুসলিম, হাদীস (৪৭৭), আবূ দাউদ, হাদীস (৮৪৭)।

বুখারী, হাদীস (৭৬১), মুসলিম, হাদীস (৪৮৪)।

মুসলিম, হাদীস (৪৮৭), আবূ দাউদ, হাদীস (৮৭২)।

মুসলিম, হাদীস (২৬৯৭), আবূ দাউদ, হাদীস (৮৫০)।

আল-ইনসাফ -আল-মুকনি ও আশ-শারহুল কাবীর সংযুক্ত (৩/২০০), মুনতাহাল ইরাদাত - বুহুতির ব্যাখ্যাসহ (১/২৯৮)।

মুসলিম, হাদীস (৫৯১), আবূ দাউদ, হাদীস (১৫১২)।

মুসলিম, হাদীস (৫৯৪); নাসাঈ, হাদীস (১৩৪০)।

বুখারী, হাদীস (৬৮৬২), মুসলিম, হাদীস (৫৯৩)

মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: সালাতের শেষে যিকির করা মুস্তাহাব, হাদীস (৫৯৭), আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।

মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: সালাতের শেষে যিকর মুস্তাহাব, হাদীস (৫৯৬), কা‘ব ইবনু উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।

বুখারী, কিতাবুত দাওয়াহ, বাব: সালাতের পরের দু‘আ, হাদীস (৬৩২৯), আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত; আর আবূ দাউদ, কিতাবুল আদব, বাব: ঘুমের আগে পড়ার দু‘আ, হাদীস (৫০৬৫), তিরমিযী, কিতাবুত দাওয়াহ, বাব: ঘুমের সময়ে তাসবীহ, তাকবীর ও তাহমীদ সংক্রান্ত যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (৩৪১০), নাসাঈ, কিতাবুস সাহু, বাব: সালামের পরবর্তী তাসবীহের সংখ্যা, হাদীস (১৩৪৯), আহমাদ, আল-মুসনাদ (২/১৬০) হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত।

তিরমিযী, কিতাবুত দাওয়াহ, বাব: ঘুমের সময়ে তাসবীহ, তাকবীর ও তাহমীদ সংক্রান্ত যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (৩৪১৩), নাসাঈ, কিতাবুস সাহু, বাব: তাসবীহের সংখ্যা সংক্রান্ত অন্য আরেকটি প্রকার, হাদীস (১৩৫১), আহমাদ, আল-মুসনাদ (৫/১৮৪), জায়েদ ইবনু সাবিত রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত। আর নাসাঈ, কিতাবুস সাহু, বাব: তাসবীহের সংখ্যা সংক্রান্ত অন্য আরেকটি প্রকার, হাদীস (১৩৫২) ইবনু উমার রদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত।

বুখারী, কিতাবুস সালাত, বাব: কিবলা সংক্রান্ত যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (৪০৪); মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: সালাতে ভুল হলে করণীয় ও সাহু সাজদাহর বিবরণ, হাদীস (৫৭২) ইবনু মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, কিতাবুস সালাত, বাব: মসজিদে আঙ্গুলসমূহ একত্রে রাখা, হাদীস (৪৮২); মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, সালাতে ভুল হলে করণীয় এবং তার জন্য সাজদা দেওয়া, হাদীস (৫৭৩); আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস। অনুরূপ মুসলিম, প্রাগুক্ত, হাদীস (৫৭৪); ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। তবে, “তিনি তৃতীয় রাকাতে সালাম ফিরিয়েছেন” বলেছেন।

বুখারী, কিতাবুল আযান, বাব: যে ব্যক্তি প্রথম তাশহহুদকে ওয়াজিব মনে করে না, হাদীস (৮২৯), মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: সালাতে ভুল হওয়া এবং সাজদায়ে সাহু, হাদীস (৫৭০)।

বুখারী, কিতাবুস সালাত, বাব: যেখানেই থাকুক, কিবলামুখী হওয়া, হাদীস (৪০১); মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: সালাতে ভুল হওয়া এবং তার জন্য সাজদা করা, হাদীস (৫৭২), ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস।

মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: সালাতে ভুল হওয়া এবং তার জন্য সাজদা করা, হাদীস (৫৭১), আবূ সাঈদ রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, কিতাব: সুজুদুল কুরআন, বাব: যে মনে করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তিলাওয়াতের সাজদাকে ওয়াজিব করেননি, হাদীস (১০৭৭)।

মুসলিম, হাদীস (৭৭১); আবূ দাউদ, হাদীস (৭৬০)

বুখারী, কিতাবুল আযান, বাব: রুকুতে তাকবীর পূর্ণ করা, হাদীস (৭৮৫); মুসলিম, কিতাবুস সালাত, বাব: প্রত্যেক উঁচু-নিচু হওয়ার সময়ে তাকবীর সাব্যস্ত করা, হাদীস (৩৯২), আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত।

বুখারী, কিতাবুল আযান, বাব: ইশার সালাতে সাজদার আয়াত তেলাওয়াত করা, হাদীস (৭৬৮); মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: তেলাওয়াতের সাজদা, হাদীস (৫৭৮)।

বুখারী, কিতাবুত-তাকসীর, বাব: যখন তার স্থান থেকে বের হয় তখন কসর করবে, হাদীস (১০৯০); মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন ও কাসরিহা, হাদীস (৩/৬৮৫)।

বুখারী, কিতাবুস সালাত, বাব: ইসরার রাতে কিভাবে সালাত ফরয করা হয়েছে, হাদীস (৩৫০); মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন ওয়া কাসরিহা, হাদীস (১/৬৮৫)।

বুখারী, কিতাবুত তাকসীর, বাব: সালাত সংক্ষেপকরণের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (১০৮১); মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন ওয়া কাসরিহা, হাদীস (৬৯৩)।

বুখারী, কিতাবুল আযান, বাব: সালাতের দিকে দৌড়াবে না, এবং কোন ব্যক্তির বক্তব্য: “আমাদের সালাত ছুটে গেছে”, হাদীস (৬৩৬), (৬৩৫); মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: ধীরে ও গাম্ভীর্য বজায় রেখে সালাতে আগমন করা, হাদীস (৬০২), (৬০৩); আবূ হুরায়রা ও আবূ কাতাদাহ রদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তবে হাদীসের শব্দাবলী আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস হতে গৃহীত।

আহমাদ, আল-মুসনাদ, (১/২১৬)।

বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, বাব: আল্লাহর বাণী: وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥ যার অর্থ: আল্লাহ তাঁর নিজের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করেছেন, হাদীস (৭৪০৫); মুসলিম, কিতাবুয যিকরি ওয়াদ দু‘আ, বাব: আল্লাহ তা‘আলার যিকর করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান, হাদীস (২৬৭৫), হাদীসটি আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত।

ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস (১/৩০৭), ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, কিতাবুল মারদ্বা, বাব: অসুস্থ ব্যক্তির উপরে হাত রাখা, হাদীস (৫৬৬০); মুসলিম, কিতাব: আল-বিরর ওয়া-সিলাহ, বাব: বিপদ আসলে এতে মুমিন ব্যক্তির সাওয়াব, হাদীস (২৫৭১), ইবনু মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, কিতাবুল মারদ্বা, বাব: অসুস্থতার কাফফারা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (৫৬৪০); মুসলিম, কিতাব: আল-বিরর ওয়া আস-সিলাহ, বাব: মুমিনের উপরে আপতিত বিপদের সওয়াব, হাদীস (২৫৭২), আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, কিতাব: তাহাজ্জুদ, হাদীস (১১৫৩); মুসলিম, কিতাব: সিয়াম, বাব: সাওমুদ দাহর নিষিদ্ধ, হাদীস (১৮২/১১৫৯-১৮৬), আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীস ।

মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন, বাব: ফজরের সুন্নাত মুস্তাহাব হওয়া, হাদীস (৭২৫), আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত হাদীস।

ইমাম আহমাদ, আল-মাসায়েল, তারই ছেলে আবুল ফযল বর্ণিত, (পৃ.৫৩), সংখ্যা ১৫৯, তাহকীক: তারিক ‘আওদুল্লাহ।

বুখারী, কিতাব: আল-বিতর, বাব: কোন ব্যক্তি যেন তার শেষ সালাত বিতর আদায় করে, হাদীস (৯৯৮); মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন, বাব: রাতের সালাত দুই দুই রাকাত, হাদীস (৭৫১), ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন, বাব: রাতের সালাতের বিস্তারিত, হাদীস (৭৪৬); আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন, বাব: দুহার সালাত মুস্তাহাব, হাদীস (৭১৯), আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, কিতাব: ঐচ্ছিক সালাতসমূহ, বাব: বাড়িতে অবস্থানকালীন দুহার সালাত আদায়, হাদীস (১১৭৮); মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন, বাব: দুহার সালাত মুস্তাহাব, হাদীস (৭২১)।

মুসলিম, কিতাব: সালাতুল মুসাফিরীন, বাব: দুহার সালাত মুস্তাহাব, হাদীস (৭২০)

বুখারী, কিতাব: মাওয়াকিতুস সালাত; বাব: যে ব্যক্তি সালাতের কথা ভুলে যায়, হাদীস (৫৯৭); মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, বাব: ছুটে যাওয়া সালাতের কাযা, হাদীস (৬৮৪); আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীস। ইমাম বুখারী “ঘুম” শব্দটি উল্লেখ করেননি।

বুখারী, কিতাব: আত-তাহাজ্জুদ, বাব: নফল সালাত দুই দুই রাকাত করে পড়ার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (১১৬৩); মুসলিম, কিতাবুস সালাত, বাব: তাহিয়্যাতুল মাসজিদ মুস্তাহাব, হাদীস (৭১৪); আবূ কাতাদাহ রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাব: সালাত পরিত্যাগকারীর উপরে কুফর শব্দের প্রয়োগ, হাদীস (৮২)।

তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান, বাব: সালাত ত্যাগের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (২৬২১)। নাসাঈ, কিতাবুস সালাত, বাব: সালাত ত্যাগকারীর হুকুম, হাদীস (৪৬৪), ইবনু মাজাহ, কিতাব: ইকামাতুস সালাত, বাব: সালাত ত্যাগের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (১০৭৯), আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদীস (৫/৩৪৬)।

মালিক, আল-মুয়াত্তা (রিওয়ায়েতে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া), কিতাবুস সালাত, বাব: যার উপরে রক্তমূল্য থাকে, তার ব্যাপারে করণীয়, (১/৮১), হাদীস (৯৩); আব্দুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ, (১/১৫০), ইবনু আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (১১/২৫), আহমাদ, আয-যুহদ (পৃ.১৫৪)।

তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান, বাব: সালাত ত্যাগ করা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস (২৬২২)।

বুখারী, কিতাবুল ফারায়েজ, বাব: মুসলিম কাফির থেকে ওয়ারিসপ্রাপ্ত হয় না, হাদীস (৬৭৬৪); মুসলিম, কিতাবুল ফারায়েজ, হাদীস (১৬১৪)।

বুখারী, কিতাবুল ফারায়েজ, বাব: পিতামাতা থেকে সন্তানের ওয়ারিস, হাদীস (৬৭৩২); মুসলিম, কিতাবুল ফারায়েজ, বাব: সুনির্দিষ্ট অংশের হকদারদের মীরাস পৌঁছে দাও, হাদীস (১৬১৫), ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

আহমাদ, আল-মুসনাদ, (২/১৬৯), আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীস।

মুসলিম, কিতাব: আত-তাওবাহ, বাব: পাপ থেকে তাওবা কবুল করা, হাদীস (২৭৫৯), আবূ মুসা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

মুসলিম, কিতাব: আয-যিকর, বাব: ইস্তিগফার (পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া) পছন্দনীয়, হাদীস (২৭০৩), আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস।

বুখারী, হাদীস (৩৩৭০); আবূ দাউদ, হাদীস (৯৭৮)

এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগ্‌ফির্ লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা, ওয়া শাহিদিনা ওয়া গা-ইবিনা, ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা, ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান্ আহ্‌ইয়াইতাহু মিন্না ফা-আহ্‌ইহি ‘আলাল ইসলাম, ওয়া মান্ তাওয়াফ্‌ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্‌ফাহু ‘আলাল ঈমান। আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়া ওয়াসসি’ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমায়ি ওয়াস সালজি ওয়ালবারাদ, ওয়া নাক্কিহি মিনাল খাতায়া কামা নাক্কাইতাছ-ছাওবাল-আবিয়াদ মিনাদ-দানাস, ওয়া আবদিলহু দারান খাইরান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আ‘ঈযহু মিন ‘আযাবিল কাবরি, ওয়া মিন ‘আযাবিন নারে। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তুদিল্লানা বা’দাহু। ওয়াগফির লানা ওয়া লাহু ইয়া রাব্বাল আলামীন। ওয়াফসাহ লাহু ফি কাবরিহী ওয়া নাওয়ির লাহু ফিহি” অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখো তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো এবং আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দান করো, তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও ও তার প্রতি দয়া কর। তার ক্রটি মার্জনা কর ও তাকে বিপদ মুক্ত কর। তার উত্তম আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর ও তার আশ্রয়স্থলকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও বৃষ্টি দিয়ে ধুয়ে মুছে দাও। তাকে পাপরাশ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দাও যেভাবে সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তাকে তার বর্তমান ঘরের পরিবর্তে আরও উত্তম ঘর দান কর, তার পরিবার থেকে উত্তম পরিবার দান কর, বর্তমান স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী দান কর এবং তাকে কবর আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এর প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করো না এবং এর পরে আমাদের পথভ্ৰষ্ট করো না। হে বিশ্বপ্রভু! আপনি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন, তার কবরকে প্রশস্থ করে দিন ও তাতে তার জন্য নূর দিন।”আর মৃত ছোট হলে বলবে: اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ ذُخْرًا لِوَالِدَيْهِ، وَفَرَطًا، وَأَجْرًا، وَشَفِيعًا مُجَابًا، اللَّهُمَّ ثَقِّلْ بِهِ مَوَازِينَهُمَا، وَأَعْظِمْ بِهِ أُجُورَهُمَا، وَأَلْحِقْهُ بِصَالِحِ سَلَفِ الْمُؤْمِنِينَ، وَاجْعَلْهُ فِي كَفَالَةِ إِبْرَاهِيمَ، وَقِهِ بِرَحْمَتِكَ عَذَابَ الْجَحِيمِ "হে আল্লাহ, তাকে তার পিতামাতার জন্য রিজিক, মর্যাদা, প্রতিদান এবং গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী করে দাও। হে আল্লাহ, তার জন্য তাদের পাল্লা ভারী করে দাও, তাদের প্রতিদানকে মহান করে দাও এবং তাকে মুমিনদের নেককার পূর্বসূরীদের সাথে মিলিয়ে দাও এবং তাকে ইব্রাহিমের তত্ত্বাবধানে রাখো এবং তোমার রহমতে তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো।"

বুখারী, হাদীস (৬০২৬); মুসলিম, হাদীস (২৬৯০)

বুখারী, কিতাবুল হিয়াল, সালাতের অনুচ্ছেদ (৬৯৫৪), মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, সালাতের জন্য পবিত্রতার আবশ্যকতার অনুচ্ছেদ (২২৫)।